March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

মুজাহিদের ফাঁসি বহাল

আদালত প্রতিবেদক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে দেয়া ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে প্রথম চূড়ান্ত রায় এটি। এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো সাবেক মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলবেন।

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

এ বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এর আগে গত ২৭ মে মুজাহিদের আপিল মামলায় দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।

এ নিয়ে আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হলো। এর মধ্যে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। আর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা গেছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির নেতা আবদুল আলীম।

মুজাহিদের আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।

অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনে গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ওই সময়ের বিভিন্ন পত্রিকা ও জার্নালে এসব নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের বেশির ভাগ সদস্যই আলবদরে যোগ দিয়েছিল। আর মুজাহিদ ছিলেন ছাত্রসংঘের প্রধান। এতে প্রমাণ হয়, আলবদর বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন মুজাহিদ।

পাকিস্তানি গবেষক সেলিম মনসুর খালেদের ‘আলবদর’ বইটির উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আগমুহূর্তে আলবদরদের উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দিয়েছিলেন ছাত্রসংঘের নাজেম বা প্রধান। এছাড়া পত্রিকায় ছাপা হওয়া দুটি প্রতিবেদনের ওপর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে আলবদর প্রধান মুজাহিদ।

মুজাহিদের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, মুজাহিদ ১৯৭১ সালে ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন কিন্তু আলবদর বাহিনীতে ছিলেন না। একাত্তরের অক্টোবর থেকে তিনি ছাত্রসংঘের সভাপতি হন। তদন্ত কর্মকর্তা আলবদর বাহিনীর নামের তালিকায় মুজাহিদের নাম পাননি।

এদিকে, এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় উল্লাস প্রকাশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। এ উপলক্ষে তারা বিজয় র‌্যালি বের করেছে। এ রায়কে বাংলাদেশের মানুষদের জন্য ঐতিহাসিক বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। তিনি যত দ্রুত সম্ভব এ রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে।

তৃতীয় অভিযোগে (ফরিদপুরের রণজিৎ নাথকে আটক রেখে নির্যাতন) তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পঞ্চম অভিযোগে (নাখালপাড়া সেনাক্যাম্পে আলতাফ মাহমুদ, রুমী, বদি, আজাদ, জুয়েল হত্যাকাণ্ড) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ষষ্ঠ (বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড) ও সপ্তম অভিযোগে (বাকচরে হিন্দুদের হত্যা ও নিপীড়ন) মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ষষ্ঠ অভিযোগের সঙ্গে প্রথম অভিযোগ (সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন হত্যা) একীভূত করায় এতে আলাদা করে শাস্তি ঘোষণা করা হয়নি। প্রমাণিত না হওয়ায় দুই ও চার নম্বর অভিযোগ থেকে মুজাহিদকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৩ সালের ১১ আগস্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে মুজাহিদ খালাস চান। সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। গত ২৯ এপ্রিল থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়। নয় কার্যদিবস ধরে চলা শুনানির প্রথম ছয় দিনে ট্রাইব্যুনালের রায় ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপরের তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মধ্য দিয়ে এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। কার্যক্রম শেষে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার জন্য ১৬ জুন দিন ধার্য করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email