কুটনৈতিক প্রতিবেদক : কোচবিহারের জেলাশাসক পি উলাগানাথন ওই বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতের ভূখণ্ড বলে চিহ্নিত হবে।
ভারত সরকার আরও জানিয়েছে যে ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ শুমারিতে যেসব ব্যক্তির নাম রয়েছে বাংলাদেশী ছিটমহল বাসী হিসাবে, তাঁরা আর তাঁদের সন্তানেরাই শুধুমাত্র ভারতের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবেন।
তবে জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহ ধরে ভারত আর বাংলাদেশের সরকারী কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত আরেকটা যৌথ জরিপ দল ছিটমহলের কোন কোন মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল রেখে সেদেশে চলে যেতে চান, তার তথ্য সংগ্রহ করবে।
পয়লা অগাস্ট থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাঁরা বাংলাদেশে চলে যেতে পারবেন টাকাপয়সা বা অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি সহ।
আনুষ্ঠানিক এই বিজ্ঞপ্তি জারীর কথা জেনে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশী ছিটমহল পোয়াতুরকুটি-র বাসিন্দা সাহেব আলি বলছিলেন, “এবার থেকে সন্তানেরা নিজের পরিচয়ে স্কুলে যেতে পারবে, ছেলে-বউকে নিজের নামেই হাসপাতালে ভর্তি করতে পারব। আশায় বুক বেঁধেছিলাম যে কবে হবে, তবে উপরওয়ালা যে এত তাড়াতাড়ি আমাদের দিকে চেয়ে দেখবেন, সেটা ভাবি নি। আজ সরকারী নোটিশ জারী হওয়ার পর আমরা নিশ্চিন্ত।“
ভূখণ্ড বিনিময় বা নাগরিকত্ব বহাল রাখার আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই কোচবিহার জেলা প্রশাসন ছিটমহলগুলিতে জমি বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত।
তারপরে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে জমি বিক্রি করা যাবে, সেকথাও উল্লেখ করেছেন কোচবিহারের জেলা প্রশাসক পি উলাগানাথন।
ছিটমহলের জমি কেনা বেচা নিয়ে একটা অসাধু চক্র অনেক দিন ধরেই সক্রিয়। আর সম্প্রতি কয়েকটি ছিটমহলে জমি নিয়ে সহিংসতাও ঘটেছে।
ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির প্রধান দীপ্তিমান সেনগুপ্তর কথায়, “এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হল যে সরকারের কাছে আগেই খবর ছিল যে ছিটমহলের জমি নিয়ে অসাধু চক্র কাজ করছে। আর যারা ওই জমি কিনছেন, তারা যে ছিটমহল বিনিময়ের পরে কোনও সুযোগ পাবেন না, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে সরকার। খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই বিজ্ঞপ্তি জারী করাটা।“
বৃহস্পতিবার ছিটমহল বিনিময়ের প্রশাসনিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের চ্যাংরা বান্ধা সীমান্ত চেকপোস্টে একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন ভারত আর বাংলাদেশের সরকারী অফিসারেরা।
এই বৈঠকে বাংলাদেশের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় আর লালমনিরহাটের জেলাশাসক, এস পি-রা হাজির হবেন আর পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও থাকবেন।
এদিকে ভোট বড় বালাই, ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের পর পরই ছিটমহলগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে বাংলাদেশি ছিটমহলে আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে ভারতীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে এখন ব্যস্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আর এই প্রশ্নে পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল থেকে বিরোধী দল বিজেপি থেকে বাম দল সিপিএম।
শাসকদল তৃণমূল যেমন দাবি করছে, মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি এই প্রশ্নে মমতা বা তৃণমূলকে এই কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তারা বলছে, মমতা প্রথম থেকেই এই বিনিময়ের বিরোধী ছিলেন। পরে তাকে রাজী করিয়ে, যে কাজ সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন।
গত রবিবারই পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানাতে কোচবিহার জেলার দিনহাটার মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহল মশাল ডাঙ্গা, পোঁয়াতুর কুঠি ও করলা গিয়ে ছিটের বাসিন্দাদের নিয়ে তিন জায়গাতেই জনসভা করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রবিন্দ্র নাথ ঘোষ। তিনি ওই দিন ছিটমহলে গিয়ে তৃণমূলের জনসভা করেন। আর সেই জনসভার পরিচালনা করেন ছিটের বাসিন্দারা। রাজনৈতিক এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নেয় ছিটের বাসিন্দারাও। এই সভায় অংশ নেয় ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সদস্য রাও। আর এই শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য আয়োজিত জনসভায় ছিটমহল বিনিময় এরপর যে প্রক্রিয়া ও সুযোগ-সুবিধা ছিটের মানুষরা পেতে চলেছে তা দ্রুত পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবিন্দ্রনাথ ঘোষ।
তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রমজানের শুভেচ্ছা নিয়ে ছিটের মানুষদের কাছে এসেছি। এছাড়া ছিটের বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করতে যে, পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে এবং তাদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা, স্কুল, রাস্তা, বিদ্যুৎ সবকিছু দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।
এই রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াইয়ে ছিটমহলে তৃনমূলের পাশাপাশি আনাগোনা রয়েছে বিজেপিরও। তবে ছিটের মানুষ এবং ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সদস্যরা তৃনমূলের পাশে দাড়ালেও ছিটমহলে ক্ষমতা বিস্তারে বিজেপির পাশে নেই ছিটের মানুষ। তা বিভিন্ন সময় প্রমাণ করে দিয়েছে ছিটের বাসিন্দা এবং ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। অতীতে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার অজুহাতে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছিল বিজেপিকে। কিন্তু অতীতেও তৃনমূলের অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও তা সরকারি অনুষ্ঠান বলেই যুক্তি খাড়া করেছিল ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
আগে যেখানে ছিটের জমিতে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির পতাকা ছাড়া কিছু দেখা যেত না, সেখানে কিন্তু ছিটমহল বিনিময়ের পর বর্তমানে মাঠ ভোরে গেছে তৃণমূলের মার্কা ঘাসফুলে।
এ বিভাগের আরো..
বাংলাদেশে সুইস বিনিয়োগ চেয়েছেন: প্রধানমন্ত্রী
আমরা আমাদের ভূখণ্ডেই থাকব: ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট
চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে হন্ডুরাস