ডেস্ক প্রতিবেদন : ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামে নেই কোনো পানির কল। এমনকি কোনো টিউবওয়েল বা কুয়াও নেই। পানির জন্য এসব গ্রামে বসবাসকারীদের ভরসা মাত্র দুটি কুপ। তা-ও পাথুরে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কুপ দুটি থেকে পানি সংগ্রহ করতে পাড়ি দিতে হয় নানা চড়াই উৎরাই। কড়া রোদে পাথর-কাঁকর আর কাঁটাঝোঁপ মাড়িয়ে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় পানি আনতে। এতো গেলো দূরত্বের কথা। পৌঁছানোর পর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। রীতিমতো লাইনে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় কুপ থেকে পানি তোলার সিরিয়াল পেতে। রয়টার্স।
নানান ঝঁক্কিঝামেলার কারণে এসব গ্রামের পুরুষরা শুধুমাত্র পানি এনে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত একাধিক বিবাহ করেন! দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রীর কাজ বাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করা। এদের ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’ নামে অভিহিত করা হয়।
একজন পুরুষের তিনজন স্ত্রী: এদেরই একজন ৬৬ বছর বয়সি সাখারাম ভাগত। তার তিনজন স্ত্রী- সাখরি, টুকি এবং ভাগি। তিনটি বিয়ে সম্পর্কে ভাগত জানান, ‘‘আমার প্রথম স্ত্রীকে সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়, তাই পানি আনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন পানি আনতে ভীষণ সমস্যা হতো। তাই তৃতীয়বার বিয়ে করি।
জলপত্নীর সম্মান: ভাগত তার দুই স্ত্রী ভাগি এবং সাখরিকে নিয়ে পানি আনতে যান। এর জন্য তাদের গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়। সংসারের প্রয়োজনে যারা এতদূর থেকে পানি বয়ে আনেন, তাদের, অর্থাৎ জলপত্নীদের গ্রামের মানুষরা খুবই সম্মানের চোখে দেখেন।
পানি আনা কঠিন শ্রম: বন্ধুর পথ মাড়িয়ে দূরে কলসি কাঁকে নারীরা পানি আনতে যাচ্ছে এমন চিত্র ভারতের মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত গ্রামের। কুয়ার সামনে স্থানীয় এক ‘জলপত্নী’ পানির পাত্র আর কলসিগুলোতো একে একে পানি ঢালছেন এমন চিত্র চোখে পড়বে এসব গ্রামের পথে।
জীবন বাঁচাতে পানি সঞ্চয়: মহারাষ্ট্রে খরা নতুন কিছু নয়। শেষবারের খরার সময় এসব গ্রামের অনেক পরিবারই জলকষ্টে ভীষণভাবে ভুগেছে। ভোগান্তি কাটাতে এবার পিতলের কলসিগুলোতে সব সময়েই যথেষ্ট পরিমাণে পানি সঞ্চয় করছে তারা।
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ তবুও: ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত এ সমস্ত গ্রামে জলপত্নীর রীতি বেড়েই চলেছে। তবে বেশিরভাগ সময়ই যেসব পুরুষ শুধু পানি আনার জন্য বিয়ে করেন, তারা জলপত্নীদের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো এক বিছানায় ঘুমান না।
তবে বেশিরভাগ সময় এসব জলপত্নীদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। কখনো মাথায় পানি বহন করার পাশাপাশি বাচ্চাদেরও কোলে নিয়ে হাটতে হয় যা খুবই অমানবিক। আসলে জলপত্নীদের জীবন এরকমই! তাদের কেউ হয় বিধবা অথবা কোনো সন্তানের মা। আগের পক্ষের সন্তান বা নাতি-নাতনিকে বড় করে তোলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে একাই অভিভাবকের সমস্ত দায়িত্বও পালন করেন এসব নারীরা।
উল্লেখ্য, সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত বছর ভারতের প্রায় ১৯ হাজার গ্রামে খাবার পানি ছিল না।
এ বিভাগের আরো..
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অমর হোক: অমর একুশে, মাতৃভাষা ও আমরা
ছয় দফা: স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সেতুবন্ধ
ঠাকুরগাওয়ের টাঙ্গন ব্যারেজে মাছ শিকারীদের মিলন মেলা