নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘুর্নিঝড় ‘কোমেন’ ধেয়ে আসছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামীকাল দুপুর নাগাদ ঘুর্নিঝড়টি বরিশাল ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। এ সময় দেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণের আশঙ্কাও রয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় জেলাসমূহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘুর্নিঝড়ের পূর্বাভাসের পর উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কক্সবাজার থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়াসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৫-৬ হাজার লোককে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম সাহার নেতৃত্বে রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। সেখান থেকে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাইকিং করার জন্য বলা হয়েছে। এরপরই সব উপজেলায় মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাত সোয়া ১১টার দিকে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, সেখানে এখন ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে, লোককে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান ̈ উত্তর- উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর এবং ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় “কোমেন” (WITH ECP 988 HPA) এ পরিণত হয়েছে। এটি আজ রাত ০৯টায় (২৯ জুলাই, ২০১৫ ইং তারিখ) চট্টগ্রাম সমুদধবন্দর থেকে ১১০ কিঃ মিঃ দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদধবন্দর থেকে ১০৫ কিঃ মিঃ পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে, মংলা সমুদধবন্দর থেকে ১৭০ কিঃ মিঃ দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদধ বন্দর থেকে ৮৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল (৩০ জুলাই, ২০১৫ ইং তারিখ) দুপুর/বিকাল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মোঃ আবদুর রহমান খান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদধ বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দেধর ৫৪ কিঃ মিঃ এর মধে ̈ বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিঃ মিঃ যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দেধর নিকটে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদধ বন্দর সমূহকে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ০৭ (সাত) নম্বর পুনঃ ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে ০৪ (চার) নম্বর নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ০৫ (পাঁচ) নম্বর পুনঃ ০৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৫ নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৫ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বর ̧না, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘন্টায় ৭০-৯০ কিঃ মিঃ বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে চটধগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও টধলার এবং সমুদধগামী জাহাজসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিভাগের আরো..
আগামীকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস
মানুষের কল্যাণে নীরবে যারা কাজ করছেন তাদের সম্মান দিন : প্রধানমন্ত্রী
স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ থাকবে ২৩-২৫ মার্চ