March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

পুলিশের হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ থাকলেও আঘাতের চিহ্ন নেই

খুলনা প্রতিনিধি : খুলনার কয়রায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৬ ‘বাঘ শিকারি’ নিহত হয়েছেন।

‘বন্দুকযুদ্ধ’ হওয়ার পর পরই ট্রলারযোগে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের কারও হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা আবার কারও পায়ে কিংবা মাথায় ব্যান্ডেজ। ব্যান্ডেজ দেখলে বোঝা যায়, গুরুতর আঘাতের চিহ্ন বা গুলিবিদ্ধের কোনো নমুনা নেই তাদের শরীরে।

থানা পুলিশের দাবি, বন্দুকযুদ্ধের সময় কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি বাঘের চামড়া, পাঁচটি অস্ত্র ও বেশকিছু গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনটি বাঘের চামড়া বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবিবার সকালে চোরামুখা গ্রাম থেকে বাঘের চামড়াগুলো উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বহু ব্যক্তি চামড়া উদ্ধারের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। চোরামুখা গ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া চামড়া ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাস্থলে কীভাবে গেল সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মনে।

থানা পুলিশ পাঁচজন আহত হওয়ার কথা জানালেও পুলিশের ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান জানান, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ৭ জন আহত হয়েছেন। কিন্তু আহত পুলিশ সদস্যদের যে ছবি তোলা হয়েছে তাতে রয়েছেন চারজন। এ ছাড়া এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি।

পুলিশ জানিয়েছে, উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন মান্দারবাড়িয়ায় রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

তবে সুন্দরবনের কোবাদক স্টেশনের বন কর্মকর্তা শিবাজী চক্রবর্তী জানান, রবিবার ভোরে উপজেলার দক্ষিণ বেতকাশী ইউনিয়নের চোরামুখা গ্রামের শফিকুল গাজীর বসতঘর থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়।

দক্ষিণ বেতকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানও জানান, তার কাছে সকালেই খবর এসেছিল দক্ষিণ বেতকাশী থেকে তিনটি বাঘের চামড়া আর ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

রবিবার ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সুন্দরবনে দুই দফায় বন্দুকযুদ্ধে ১৩ জন নিহত হন। পুলিশের দাবি, ওই ১৩ জন বনদস্যু ছিলেন। রবিবার নতুন করে ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ঘুরেফিরে এসেছে আগের ১৩ জন নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ।

কয়রা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা রবিবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছিলেন দক্ষিণ বেতকাশীর চোরামুখা গ্রাম থেকে তিনটি বাঘের চামড়াসহ ৭ জনকে আটক করা হয়।

স্থানীয় এক ট্রলারের মালিক ‘আহত’ পুলিশ সদস্যদের ছবি দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা ঠিকই কিন্তু রক্তের কোনো দাগ দেখছি না। সত্যিকার বন্দুকযুদ্ধ হলে পুলিশ সদস্যদের গায়েও তো গুলি লাগার কথা।’

তিনি সংশয় ব্যক্ত করে জানান, পুলিশ আগে থেকেই ঘটনাস্থলে তুলা আর ব্যান্ডেজের কাপড় নিয়ে গেছিল। গুলিতে ৬ জন নিহত হওয়ার পর পুলিশ নিজেরাই ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে।

পুলিশের মাথায় ব্যান্ডেজ থাকলেও শরীরে আঘাতের চিহ্ন না থাকা প্রসঙ্গে কয়রা থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, কে বলেছে আঘাতের চিহ্ন নেই। আহত স্থানেই তো ব্যান্ডেজ করা।

Print Friendly, PDF & Email