March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তির দ্বারা অরক্ষিত বাংলাদেশ : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : খাদ্য উৎপাদন এবং নিরাপত্তায় বাংলাদেশ দারুণ অগ্রগতি করলেও কিছু অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তির দ্বারা অরক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র্র্র্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচীর সাম্প্রতিক পর্যায়ের অর্জন ও প্রাপ্ত শিক্ষা থেকে ভবিষ্যত পরিকল্পনা’র প্রতিবেদন উপস্থাপন সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মসূচিটি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) বাস্তবায়ন করছে।

অপরদিকে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) বিষয়ে বলেন, এটি বাংলাদেশ হারায়নি স্থগিত হয়েছে মাত্র।

অন্যদিকে সকালে অনুষ্ঠিত ‘শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচীর সাম্প্রতিক পর্যায়ের অর্জন ও প্রাপ্ত শিক্ষা থেকে ভবিষ্যত পরিকল্পনা’র প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জেরুজালেস্কিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেন, কৃষিখাতে সাফল্য সত্ত্বেও বাংলাদেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তির দ্বারা অরক্ষিত। বিশ্বখাদ্য মূল্যের ওঠানামা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং মৌসুমী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও এই খাতগুলোতে এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে তা নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবন-যাত্রার মান উন্নত করতে বিশেষ করে যারা দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত তাদের উন্নয়নের জন্য এখনও অনেক কিছু করতে হবে।

বার্নিকাট বলেন, প্রায় ৩ কোটি বাংলাদেশী এখনও হতদরিদ্র এবং ক্রমাগত অপুষ্টিতে ভুগছে। কমপক্ষে ৬ কোটি বাংলাদেশী প্রতিবছর ৬/৭ মাস পর্যাপ্ত খাদ্য পায় না। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরো ভয়াবহ। ৫ বছরের নিচের ৩৬ শতাংশ শিশু তাদের বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত লম্বা নয় অথবা খর্বাকৃতি।

মার্শা ব্লুম বার্নিকাট আরো বলেন, গত ৪৫ বছর ধরে, বাংলাদেশ তার নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে দারুণ অগ্রগতি করেছে। বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে প্রায় স্বনির্ভর। চরম দারিদ্র গত কয়েক বছরে অনেকটাই কমে এসেছে এবং ফলস্বরূপ স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষ আরও সুযোগ পাচ্ছে এবং তারা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ এবং উৎপাদনশীল।

তিনি জানান, গত ৫ বছরে ইউএসএআইডি’র শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচীর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের দরিদ্র এবং অরক্ষিত ৩৫ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছেছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলার জন্য এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র এবং অরক্ষিত মানুষদের জন্য এই বছর ইউএসএআইডি শান্তির জন্য খাদ্য প্রকল্পের ৫ বছর মেয়াদী ১৮ কোটি ডলারের নতুন প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে।

গত ৫ বছরের সাফল্যের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ‘শান্তির জন্য খাদ্য’ কর্মসূচীর নতুন পর্যায়ে ৩টি চলমান লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। এগুলো হচ্ছে, স্থানীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, ভোগ এবং বাজার সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা বাড়ানো, খাদ্যাভ্যাস উন্নত এবং পরিবারগুলোকে তাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করতে সহায়তা করার মাধ্যমে অপুষ্টির হার কমানো এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি ও দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থা আরও দ্রুত ও সাফল্যের সঙ্গে গ্রহণ করতে সরকারি সংস্থা এবং কমিউনিটিগুলোকে সাহায্য করার মাধ্যমে দুর্যোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।

অনুষ্ঠানে ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জেরুজালেস্কি বলেন, ২০১০ সাল থেকে তৃণমূল পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচী একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে আসছে। শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে ইউএসএআইডি জনগণকে বিশেষ করে গরিব এবং সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, পুষ্টি, পানি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দান করতে স্থানীয় সরকার, নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত অত্যন্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা জমিহীন ও অত্যন্ত পুষ্টিহীনতায় ভুগে তাদের জন্য এই কর্মসূচীটি পরিচালিত হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকেটের সাক্ষাত করেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্র্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত চেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য বাংলাদেশকে আরও তথ্য দিতে বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

এসময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) কোনো রাজনৈতিক কারণে যায়নি। এছাড়া এটি হারায়নি বাংলাদেশ। বরং স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকেট।

এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) কোনো রাজনৈতিক কারণে যায়নি। এছাড়া এটি হারায়নি বাংলাদেশ। বরং স্থগিত রয়েছে।

বার্নিকেট আরও বলেন, পোশাক কারখানাগুলোর মান উন্নয়নে জোর দিতে বলা হয়েছিল বাংলাদেশকে। ইতোমধ্যে অগ্রগতি অনেক হয়েছে। তবে কিছু কিছু কারখানা পরিবেশগত উন্নতি সাধনে ধীর গতিতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন আরও উন্নতি। এছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই চাকরি চলে যায় শ্রমিকদের। এটি রোধ করা দরকার। পাশাপাশি উন্নতির ধারাতে দেশের পোশাকখাত ও শ্রমিকরা থাকলেও এটি ততটা দৃশ্যমান নয়। যা আরও দৃশ্যমান হতে হবে। নিরাপত্তা ও মান উন্নয়ন হলে এটি অধিক দৃশ্যমান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা যারা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন তাদের বিষয়ে আরও নতুন কোনো তথ্য থাকলে দিতে পারে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র জানান বার্নিকেট।

Print Friendly, PDF & Email