March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

খালেদার পাঁচ জন্ম তারিখ !

ডেস্ক প্রতিবেদন : বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ৫ টি বলে জানিয়েছে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি জাতীয় দৈনিক দি ডেইলি স্টার।

সংবাদটির শুরুতেই ডেইলি স্টার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি প্রকাশিত কৌতুক সৃষ্টিকারী বেগম খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের ছবির কথা উল্লেখ করে।

ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া বেগম জিয়ার ওই দুই পাসপোর্টের বরাত দিয়ে ডেইলি স্টার জানায়, প্রথম পাসপোর্টটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৪ সালের মে মাসে। সেই পাসপোর্টে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ই আগস্ট উল্লেখ করা হয় এবং ফেসবুকের দ্বিতীয় পাসপোর্টটিতেও বেগম জিয়ার জন্ম তারিখ একই উল্লেখ করা হয়। তবে দ্বিতীয় পাসপোর্টটি মেশিন রিডেবল।

এই পর্যায়ে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি ফেসবুকে প্রকাশিত বেগম জিয়ার পাসপোর্টের ছবি ভুয়া না হয় তাহলে সব মিলিয়ে তার জন্ম তারিখ ৫ বারে গিয়ে ঠেকবে। এই পাঁচটি তারিখের মধ্যে রয়েছে-৫ই আগস্ট ১৯৪৪, ৫ই আগস্ট ১৯৪৬, ১৯শে আগস্ট ১৯৪৭, ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ এবং ১৫ই আগস্ট ১৯.. অর্থাৎ ১৫ই আগস্টের জন্ম তারিখের সাথে কোন সাল উল্লেখ নেই।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়া নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তার জন্ম তারিখ ১৫ই আগস্ট পালন করে আসছেন। এর আগে আমরা কখনই তাকে জন্ম তারিখ পালন করতে দেখিনি।

ডেইলি স্টারের রিপোর্টে বলা হয়, কিন্তু তার (খালেদার) ১৫ই আগস্টের জন্ম তারিখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর সাথে “মিলে (coincides)” যায়।

রিপোর্টে দাবি করা হয়, অতীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার (খালেদা জিয়ার) জন্ম তারিখ বিভিন্ন রকম উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে গণমাধ্যমের এক রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়া তার মেট্রিকুলেশান পরীক্ষার ফর্মে নিজের জন্ম তারিখ ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ উল্লেখ করেছেন।

এ পর্যায়ে ডেইলি স্টার খালেদা জিয়ার বিবাহ সনদ ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার রেকর্ডের বরাত দিয়ে জানায়, ওই দুই ক্ষেত্রে তার জন্ম তারিখ যথাক্রমে ৫ই আগস্ট ১৯৪৪ এবং ১৯ আগস্ট ১৯৪৭।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয় এবং ওই দিনকে সরকারি ছুটি হিসেবে ধার্য করা হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে খালেদা ক্ষমতায় আসার পর ১৫ই আগস্টের জাতীয় শোক দিবস তুলে নেয়া হয় এবং ওইদিনের সরকারি ছুটিও বাতিল করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর আবারও ১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন এবং সরকারি ছুটি কার্যকর করা হয়।

স্টারের রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ১৫ই আগস্টের জন্ম তারিখ পালন সব সময়ই একটি বিতর্কিত বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কারণ ১৯৯৫ অথবা ১৯৯৬ সালের পূর্বে কখনই তাকে এই জন্ম তারিখ পালন করতে দেখা যায়নি। “অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করেন যে, এটা শুধুমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করতেই করা হয়”। এটা এজন্যই করা হয়, যেন মানুষ এই দিনটিতে সান্তনা দেয়ার কথা ভুলে উৎসবে মেতে থাকেন-কারণ এটি যে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ।

বিএনপির আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি তুলে ধরে ডেইলি স্টার উল্লেখ করে, বিএনপি অবশ্য এটি সত্যিই খালেদার জন্ম তারিখ বলে দাবি করে আসছে। এমনকি বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হয় যে বঙ্গবন্ধু যেই দিনে খুন হয়েছিলেন সেই দিনে কি কেউ জন্ম নিতে পারবেন না? তবে, মজার ব্যাপার হলো খালেদা জিয়ার ১৫ই আগস্টের জন্ম তারিখের সাথে বিএনপি কখনই সাল উল্লেখ করে না।

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে সবশেষ উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়া এক সপ্তাহের জন্য মেডিকেল চেকআপ করাতে লন্ডনে যাচ্ছেন। আর সে কারণে এবার ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বিদেশে অবস্থান করার সম্ভাবনা রয়েছে। হতে পারে, তিনি (বেগম জিয়া) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বিতর্ক এড়িয়ে চলতে চান। বাকিটা কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা জানতে পারবো।

এদিকে, খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে দেয়া পাসপোর্টের বরাত দিয়ে দি ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে ফেসবুকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন নোমান খান নামের একজন।

খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ৫ই আগস্ট ১৯৪৬ সাল উল্লেখ করে ফেসবুক থেকে খালেদার পাসপোর্টের যেই ছবি ডেইলি স্টার উল্লেখ করেছে তাকে ভুয়া আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

একই সাথে প্রতিবাদকারী নোমান খান খালেদা জিয়ার ওই একই পাসপোর্টের একই পাতার ছবি পোস্ট করেন যেখানে বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ১৫ই আগস্ট উল্লেখ রয়েছে। পাঠকদের জন্য নোমান খানের পোস্ট করা ১৫ই আগস্ট ১৯৪৬ সালে খালেদা জিয়ার জন্ম সংক্রান্ত পেইজটি এখানে সংযুক্ত করা হলো।

Print Friendly, PDF & Email