March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

গরমে চর্মরোগ

গরম কাল মানেই নানান রকম রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে চর্মরোগের। হ্যাঁ, চর্মরোগের জন্য গরম একটা আদর্শ মৌসুম। কেননা এই সময়ে শরীরে ঘাম প্রচুর হয়, আর সেই ঘামের কারণেও জন্ম নেয় নানান রকম অসুখ বা চর্মরোগ।

ঘামাচির কথাটাই ধরুন। গরম এলে অনেকেরই বাড়ে এই ঘামাচির যন্ত্রণা, আবার শীত এলেই কিন্তু গায়েব। ঘামাচি ছাড়াও আরও কিছু বেশ সিরিয়াস ধরনের চর্মরোগ আছে যারা কিনা গরমে বেড়ে যায়। যেমন- দাদ, ছুলি ইত্যাদি। সেই সমস্ত নিয়েই আজকের আলোচনা।

ঘামাচি-

গরমকালের একটি বিব্রতকর রোগের নাম হচ্ছে ঘামাচি। এ রোগটি গরমকালেই হয়। শীত এলে আপনা আপনিই রোগটি ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগটির নাম হলো মিলিয়ারিয়া। এটি একটি ঘর্মগ্রন্থির রোগ।

গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে ফলে তখনকার এত বেশি পরিমাণ নিঃসরণ ঘর্মগ্রন্থির নালীকে ফুটো করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে, যা পানিভর্তি ছোট ছোট দানার আকারে ফুলে উঠতে দেখা যায় এবং যা চুলকায় এবং তাতে সামান্য জ্বালাপোড়া ভাবও থাকে।

মূলত এটাই হচ্ছে ঘামাচি।এই রোগ মুক্ত থাকার সাথে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার একটা সম্পর্ক আছে। যেমন ধরুন কোনো ব্যক্তি যদি ঘরে, অফিসে এবং গাড়িতে এয়ারকুলার ব্যবহার করেন তবে বলা যায়, তার এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা গরমকালেও নেই।

যারা তা পারেন না তাদের সব সময়ই ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকতে হবে। অর্থাৎ একটি ফ্যান অন্তত সার্বক্ষণিকভাবে মাথার ওপরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। খোলামেলা অর্থাৎ আবদ্ধ ঘর না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

ঘামাচি তিন ধরনের হয়। প্রথমে আসা যায় মিলিয়ারিয়া, কৃস্টালিনা­ এ ক্ষেত্রে ত্বক দেখতে প্রায় স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না।

দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মিলিয়ারিয়া, রুবরার ক্ষেত্রে ঘর্মনালীতে বদ্ধতা দেখা দেয় এবং এ ক্ষেত্রে ত্বকের ওপরে ছোট ছোট অসংখ্য গোটা হতে দেখা যায় এবং গোটার মাথায় পানির দানা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে এবং ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে আপেক্ষিকভাবে লালচে রঙের দেখা যায়।

এ ক্ষেত্রে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি, যা শরীরের মূল অংশ অর্থাৎ বুক, পিঠ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়। তৃতীয়টি বা মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা এর ক্ষেত্রে ঘর্মানালীর বদ্ধতা থাকে ত্বকের অনেক গভীরে। ফলে ত্বক দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক ধরনের বলে মনে হতে পারে।

এ তিনটির মধ্যে দ্বিতীয়টির আক্রমণ হয় বেশি তীব্র। একে Heat rash-ও বলা হয়ে থাকে। গরম ও স্যাঁতস্যেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয়। তেল মাখলে এ রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। যারা এ রোগে ভুগছেন তারা গরম স্যাঁতস্যেঁতে ও আবদ্ধ পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজন হলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

দাদ-

দাদ দেহের যেকোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। যে স্থানে দেখা দেয় সেই স্থানটিতে গোলাকার চাকার মতো দাগ দেখা যায়। যার মধ্যখানের চামড়া প্রায় স্বাভাবিক আকারে দেখতে হলেও দাগের পরিধিতে ছোট ছোট গোটা দেখা যায় এবং দাগের পরিধি উঁচু বিভক্তি লাইন আকারে লক্ষ্য করা যায়।

চুলকালে সেখান থেকে কষ ঝরতে থাকে। শরীরের যেকোনো স্থানে এর আক্রমণ ঘটতে পারে। তবে দেখা গেছে, সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পাছা, পিঠ, মাথা, কুচকি ইত্যাদি স্থানে এর আক্রমণ বেশি ঘটতে দেখা যায়।

এক হিসাবে দেখা গেছে আমাদের দেশে প্রতি বছর অন্ততপক্ষে ৭০-৮০ হাজার লোক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আবার বিশ্বব্যাপী এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ লোক তাদের জীবদ্দশায় কখনো না কখনো এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

ছুলি-

এটিও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। ছত্রাকের যে জীবাণু দিয়ে এ রোগটি হয় তার নাম ম্যালাছাজিয়া ফার ফার। গরমকালে এ রোগটি হয় এবং শীতকাল এলে এমনিতেই যেন মিলিয়ে যায়। গরমকালে এই রোগ হওয়ার কারণ হচ্ছে ত্বক ঘামে ভেজা থাকে ফলে ভেজা স্থানে এই রোগের জীবাণুর আক্রমণ ঘটে।

এ রোগে আক্রান্ত স্থানে হালকা, বাদামি, সাদা গোলাকৃতির দাগ হতে দেখা যায়। সাধারণত বুক, গলার দু’পার্শ্ব, ঘাড়ের পেছন দিক, পিঠের ওপরের অংশ, বগলের নিচে, এমনকি সারা শরীরেও হয়ে থাকতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত ত্বক দেখতে সাদা হয় তাই অনেকে আবার একে শ্বেতি বলেও ভাবতে শুরু করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতির সাথে এর কোনোই সম্পর্ক নেই।

Print Friendly, PDF & Email