March 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

নির্ধারিত স্থানে কোরবানি নিয়ে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : আর মাত্র দুদিন বাদেই দেশে পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এবারই প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। দুই সিটি কর্পোরেশনের নব্বইটি ওয়ার্ডের ৪৯৩টি স্থানে কোরবানির প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করতে চান না নগরীর অনেকেই। তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে একইসঙ্গে পশু জবাই দুরূহ কাজ। এনিয়ে বিশৃঙ্খলা, এমনকি সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন তাদের কেউ কেউ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রাকিব উদ্দিন বলেন, নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করার উদ্যোগটি পরিক্ষামূলকভাবে নেওয়া হয়েছে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, কোরবানি ঈদে প্রতি বছর রাজধানীতে কয়েক লাখ পশু জবাই করা হয়। যেখানে-সেখানে পশু জবাই করায় বর্জ্য অপসারণে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় বর্জ্য সরাতে কয়েকদিন সময় লাগে। ফলে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে একদিকে নগরীর পরিবেশ নষ্ট হয়; অন্যদিকে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পশু জবাইয়ের জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যথাক্রমে ২০৮টি ও ২৮৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

কোরবানির জন্য পশু জবাইয়ের স্থান নির্বাচন নিয়ে রাজধানীবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এমন উদ্যোগে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন নগরবাসীর কেউ কেউ। নির্ধারিত স্থানে ২০ শতাংশ পশু জবাই করা সম্ভব হবে কি না- তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

কমলাপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ঈদের নামাজের পর প্রতিটি এলাকায় পশু জবাই দিতে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এখন সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানগুলোতে আগে পশু জবাইয়ের প্রতিযোগিতা হবে। চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের হতে পারে। এমনকি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে।

রামপুরার বাসিন্দা মো. উজ্জল জানান, একই স্থানে কোন প্রক্রিয়ায় পশু জবাই হবে- তা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। দূর-দূরান্ত থেকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু নিয়ে যেতে নামাজের পরপরই দৌড়াদৌড়ি শুরু করতে হবে। পশু নিয়ে ঘর থেকে কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার সময়ও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

এদিকে, নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করার নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। বিবৃতির মাধ্যমে ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা জানান, কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা সুন্নাত। কেউ না পারলে সামনে থেকে অন্য কাউকে দিয়ে জবাই করাবে। এটাই ইসলামের নিয়ম।

তারা আরও বলেন, ইতোপূর্বে নিজ নিজ এলাকায় পশু জবাই নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। হঠাৎ করে পরিবেশ বিনষ্টের অজুহাত কেন দেখানো হচ্ছে? তা ভাবনার বিষয়। পরিবেশের দোহাই দিয়ে কোরবানি বন্ধের অপরিণামদর্শী কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

পশুর বজ্য অপসারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ লাখ ৫০ হাজার গারবেজ ব্যাগ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। কোরবানির আগে ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয় থেকে এই ব্যাগ সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।

তিনি বলেন, প্রথমবারের ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকাতে ২০০ এর বেশি জায়গায় কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তা অথবা বাড়ির গ্যারেজে কোরবানি না দিয়ে নির্ধারিত স্থানে কোরবানির সব কাজ সম্পন্ন করলে পরিবেশ ভালো থাকবে; দুর্গন্ধ থেকেও মুক্তি পাবে। একটু সচেতন হলেই আমাদের শহরকে সুন্দর ও পরিষ্কার রাখা সম্ভব।

Print Friendly, PDF & Email