March 19, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

গুগল-ইউটিউব যে আশ্বাস দিল বাংলাদেশকে

প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও ইউটিউবে কোনও আপত্তিকর বিষয়, কনটেন্ট, ভিডিওচিত্র বা হুমকির তথ্য প্রকাশিত হলে তা সাধারণত পোর্টাল থেকে সরানো হয় না। গুগল-ইউটিউবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এমন অভিযোগ অনেক পুরনো। তবে সম্প্রতি গুগল-ইউটিউবের বাংলাদেশের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। তারা যে বিষয় দুটিতে এতদিন ‘কঠোর মনোভাব’ দেখাত, সেখান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে।

পোর্টাল দুটি সম্প্রতি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করলে ক্ষতিকর যেকোনও কনটেন্ট পোর্টাল থেকে সরিয়ে নিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।  সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে  ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশকে এসব ব্যাপারে আশ্বস্ত করে গুগল।

সিঙ্গাপুরে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন গুগলের গ্রেটার চায়না ও সাউথ ইস্ট-এশিয়ার পরিচালক (পলিসি ও গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স) অ্যান লাভিন ও সাউথ এশিয়া এমার্জিং মার্কেটের ফজল আশফাক। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তারানা হালিম গুগল কর্তৃপক্ষকে জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি একটি বিশাল হুমকি। মিথ্যা, মানহানিকর, অপবাদমূলক, হয়রানিমূলক, বিরোধপূর্ণ, জঙ্গিবাদী, ঘৃণা মিশ্রিত, অশ্লীল ও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর প্রচার বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক। তিনি জানান, ক্রোম ব্রাউজারের মাধ্যমে ব্রাউজের ক্ষেত্রে আইপি ঠিকানা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এছাড়া আপত্তিকর ও বেআইনি কনটেন্ট অপসারণসহ নিরাপত্তার স্বার্থে ই-মেইল ব্যবহারকারীর তথ্য গুগল থেকে পাওয়া যায় না। তিনি এসব বিষয়ে গুগলের কাছে সহযোগিতা চান। একই সঙ্গে  অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে পাসওয়ার্ড লক করা থাকলে তথ্য উদ্ধার এবং এনক্রিপটেড তথ্যর ওপর নজরদারির ক্ষেত্রে তিনি গুগলের কাছে সহযোগিতা চান।

প্রতিমন্ত্রী গুগল কর্তৃপক্ষকে জানান, বাংলাদেশে সাইবার সন্ত্রাসের শিকার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭৩ জনই নারী। তিনি গুগলের সেবা ব্যবহারে মেইলসহ অন্যান্য অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দেওয়া উপযুক্ত বয়সের প্রমাণকে বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।

গুগল কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং আশ্বস্ত করেন তারা বাংলাদেশকে আলোচিত বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

গুগল বাংলাদেশকে জানায়, গুগল ডট কম ডট বিডি সার্চে আপত্তিকর বিষয়াদি থাকলে তা শনাক্ত করে অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সার্চ রেজাল্ট বা পেজের ইউআরএলগুলো গুগলের দৃষ্টিতে আনতে হবে।

গুগল জানায়, গুগল থেকে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি ফরম ব্যবহার করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। নির্দিষ্ট সেবার জন্য নির্ধারিত টুল ব্যবহার করে অভিযোগ জানানো যাবে বলে বলা হয়েছে। আরও জানানো হয়, নিরাপত্তার হুমকি সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট-এর ক্ষেত্রে গুগল জরুরি কার্যধারা গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যথাযথভাবে গুগলকে তথ্য প্রদান বা চাহিদা পাঠাতে হবে। গুগল যুক্তরোষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর মাধ্যমে জরুরি তথ্য প্রদান করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাড়া দেওয়ার সময় গড়ে ৮ ঘণ্টা। তবে সর্বনিম্ন ২ ঘণ্টাতেও তা সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়।

গুগল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে আরও জানায়, গুগলের মতে মানহানির সুনির্দিষ্ট কোনও সংজ্ঞা নেই। একটি দেশর সামাজিক অবস্থান এবং পরিস্থিতির ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। গুগল বিশ্বব্যাপী কমিউনিটি গাইডলাইন অনুসরণ করে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের বেলায় গুগল ভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ব্লগারের নীতিমালা ইউটিউবের তুলনায় নমনীয়। আবার ইউটিউবে অশ্লীল ভিডিও-এর বেলায় গুগল কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করে।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, গুগল বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে এই বলে যে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংক্রান্ত যেকোনও বিষয়ে গুগল খুবই কঠোর এবং এ সংক্রান্ত কনটেন্ট (বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়) নজরে আসামাত্র গুগল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোডের ক্ষেত্রে তার কপিরাইট সংরক্ষণ করা হলে ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হয় বলেও জানায় গুগল।

গুগল আরও জানিয়েছে, মেইল অ্যাকাউন্ট বা অন্যান্য অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বয়সের প্রামাণিক দলিল গ্রহণের কোনও নীতিমালা গুগলের বর্তমানে নেই। তবে পাসওয়ার্ড উদ্ধারের (পাসওয়ার্ড রিট্রাইভেল) ক্ষেত্রে পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত প্রমাণ দাখিলের ব্যবস্থা রয়েছে।

গুগলেরই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউটিউবের ক্ষেত্রে বলা হয়, ইউটিউবে অশ্লীল কোনও ভিডিওর বেলায় গুগল কঠোর নীতিমালা অবলম্বন করে থাকে। ইউটিউবে কোনও ভিডিওর বিষয়ে আপত্তি থাকলে তার কোন অংশে আপত্তি, সে বিষয়ে রিপোর্ট বা ফ্ল্যাগিং করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে টাইমস্ট্যাম্প উল্লেখ করা জরুরি বলেও জানানো হয়। সেক্সুয়াল কনটেন্ট, ভায়োলেন্ট, ঘৃণাসূচক তথ্য, ক্ষতিকর তথ্য, শিশুদের অপব্যবহার, স্প্যামের বিষয়ে রিপোর্ট বা ফ্ল্যাগিং করা যাবে।

 এ সব বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। গুগল ও ইউটিউবে প্রকাশিত যেকোনও ধরনের আপত্তিকর তথ্য সরাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে।

Print Friendly, PDF & Email