March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জাতীয় বাজেটে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি সুজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ৩২৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ ছিল মোট ৭৯৭ কোটি টাকা। যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি বলে অভিযোগ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যাকারিতা নিশ্চিতের লক্ষে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সংগঠনটির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক।

সংগঠনটির নির্বাহী সদস্য লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করেন, ‘যেখানে আইন ও বিচারের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২৯ কোটি টাকা। অপরদিকে দেশের মৎস্য ও পশু সম্পদ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় আড়াই গুণ বেশি,৭৯৭ কোটি টাকা।’

রাজধানীর মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের বাড়তি কাজের জন্য অতিরিক্ত ৪৩০ কোটি টাকার বর্ধিত ব্যয় অনুমোদন হয়েছে। আবার এক কিলোমিটার বর্ধিত ফ্লাইওভারের খরচে সাড়া বছরের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সকল উন্নয়ন কাজের বরাদ্দের চেয়ে ঢের বেশি বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘বড়দাগে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ হয়ে থাকে মোট বাজেটের ০.৩-০.৪ শতাংশ। অপরদিকে তুলনামূলকভাবে মৎস্য ও পশু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ০.৫-০.৬ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। অপরদিকে তুলনামূলকভাবে মৎস্য ও পশু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মৎস্য ও পশু খাতের বাজেট, বিচারক কোর্ট-কর্মচারী ও আইনজীবীদের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, জাতীয় বাজেটে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, ‘দুদক সরকারি দলের দুর্নীতি দেখতে পায়না। সংসদ আছে তবে তার কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেই। আইনের শাসন না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জনকল্যাণে আনা যাবে না।’

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‌সংবিধানের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দলীয়করনের মাধ্যমে। কোনও দল নির্বাচনে যদি ৩০০ আসনও পেয়ে থাকে তারপরও তারা অযোগ্য কোনও ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারে না। অথচ এখানে সেটাই হচ্ছে।’

 আইনের শাসন প্রসঙ্গে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন,‘বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে কাজ না করে, তবে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও শতভাগ নিশ্চিত করা যাবে না।’

 সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন,‘আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে বিচারিক ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বিচার ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে হবে।’

পুলিশের কাছে মানুষ আইনের আশ্রয় নিতে যায়। আর তারা মানুষ পোড়ানোর মতও অপরাধ করছে। আমি জানিনা পরিবারটি সঠিক বিচার পাবে কিনা বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘যে মুহূর্তে আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি, ঠিক সে মুহূর্তেই দেশে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। একজন বিচারপতি অবসরের পর প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে কথা বলছে, অথচ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হচ্ছে না?’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হাফিজউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আবদুল মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email