March 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

মুক্তিযোদ্ধা আজম খান আছেন সবার মাঝে

ডেস্ক প্রতিবেদন : আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, আর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে ২০১১ সালের ৫ জুন মায়ার সাগর পাড়ি দিয়েছিলেন পপ তারকা, মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। সময়ের ঘূর্ণায়মান চাকায় পাঁচ বছর কেটে গেছে। আজম খানকে নিয়ে এখন আর তেমন মাতামাতি হয় না। সময়ের নিষ্ঠুর বাস্তবতায় আমরা কাটিয়ে উঠেছি পপ গুরুর শোক।

গলির মোড়ের সিডির দোকানেও ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’র জায়গায় চলে এসেছে অনেক নতুন নতুন গান। কিন্তু সময়ের স্রোতে এখনো মাঝে মাঝে কোনো কোনো মুঠোফোনে বেজে উঠে আজম খানের বিখ্যাত গান ‘রেল লাইনের ঐ বস্তিতে’। দেহান্তরী হয়েছেন এই শিল্পী। কিন্তু গানের মাধ্যমে সবার মাঝেই তিনি এখনো বেঁচে আছেন।

আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন। ১৯৫৬ সাল থেকে কমলাপুরে বসবাস শুরু করেন আজম খানের পরিবার। একই বছর কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

মাত্র ২১ বছর বয়সে ঢাকা উত্তরের সেকশন কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আজম খান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আখন্দ ভ্রাতৃদ্বয় (লাকী আখন্দ ও হ্যাপি আখন্দ), আরও কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তুলেন ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’।

১৯৭২ সালে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ এবং ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিটিভিতে। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এ দুটো গান। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের ব্যান্ড।

১৯৮১ সালে ১৪ জানুয়ারি, সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় আজম খানের। তখন তার বয়স ছিল ৩১ বছর। সহধর্মিণী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী জীবন কাটান তিনি। আজম খানের দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে ইমা খান, মেজ ছেলে হৃদয় খান ও ছোট মেয়ে অরনী খান। এছাড়া আছেন চার ভাই, এক বোন।

আজম খান ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ শিরোনামে গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি।

১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ শিরোনামের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হন। এরপর ২০০৫ ও ২০০৮ সালে বাংলালিংক এবং ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মডেল হন।

খেলাধুলায়ও ব্যাপক আগ্রহ ছিল আজম খানের। ক্রিকেটার হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন এ পপ তারকা। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন। ৯ বছরে অনেকগুলো ক্রিকেট ম্যাচে নিজের খেলোয়ার প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

মুখ গহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন আজম খান। দেশে-বিদেশে অনেক চিকিৎসার পরও তাকে ফেরানো যায়নি। অসাধারণ কণ্ঠের এক সংগীত জাদুকরের জীবন থেমে যায় ৬১ বছর বয়সে ২০১১ সালে ৫ জুন। আজম খান নেই, আছে তার তুমুল জনপ্রিয় সব গান। গানের মধ্য দিয়েই পপসম্রাট আজম খান অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন আজীবন।

Print Friendly, PDF & Email