March 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

মুক্তিযুদ্ধের গল্প-গাঁথার পাশাপাশি  ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করেন বিশ্ব সুন্দরী প্রিয়তি

ডেস্ক প্রতিবেদক :  বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের গল্প-গাঁথার পাশাপাশি হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করেন নিজের ভেতরে।বিদেশে বসবাস করলেও মনেপ্রাণে বাংলাদেশকে ধারণ করেন। বাঙালির প্রাণের উৎসবগুলোকে একান্ত আপন ভেবে আনন্দে মেতে ওঠেন। সন্তানদের শেখান বাংলা সংস্কৃতি।

তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিশ্ব সুন্দরী মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। বসবাস করছেন আয়ারল্যান্ডে। পেশায় তিনি বৈমানিক। ২০১৪ সালে মিজ আয়ারল্যান্ড নির্বাচিত হয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হন। সম্প্রতি জয় করেছেন বিশ্ব সুন্দরীদের মর্যাদাপূর্ণ আসর ‘মিজ আর্থ’ খেতাব। অভিনয় করছেন আয়ারল্যান্ডের চলচ্চিত্রে। প্রস্তাব এসেছে হলিউড-বলিউডের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের।

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন প্রিয়তি। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়েছেন তিনি। সেই কথায় নিজের ফেসবুকে লিখেছেন এই মডেল। বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রিয়তি কিছু প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

ফেসবুকে লেখা প্রিয়তির প্রত্যাশার কথা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :

বুঝতে পারছি না, রাষ্ট্রের কাছে এই চাওয়াটা কি বেশি বাড়াবাড়ি হবে?

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি, আন্তর্জাতিক মডেল

এপ্রিল মাস আসতেই মনটা আবার পড়ে আছে বাংলাদেশে। গত মাসের এই দিনে আমি দেশে গিয়েছিলাম, অনেক বছর পর পয়লা বৈশাখ পালন করতে। যদিও গত বছর পয়লা বৈশাখে অনেক ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে, যা বাঙালির এই রকম এত বড় উৎসবে কল্পনাও করা যায় না, যা কি না খুব দুঃখজনক। গত বছর এপ্রিল থেকে এই বছরের গত সপ্তাহ পর্যন্ত অনেকখানি ভুলেও গিয়েছিলাম, গত বৈশাখে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো। গত সপ্তাহে এক বিদেশি মনে করিয়ে দিল আবার। কিছুটা কাঁটা ঘায়ে লবণের ছিঁটার মতো। আমাদের নিজেদের পরিবারে অনেক ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে -যা আমরা পরিবারের স্বার্থে, পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে -এ স্বার্থে বাইরের মানুষদের বলতে চাই না। ঠিক সেই ভাবেই নিজের দেশের নেগেটিভ কোনো কথা বা ঘটনা অন্য কোনো দেশের মানুষের কাছ থেকে শুনতে কষ্ট লাগে।

কথাগুলো বলছি, এবার পয়লা বৈশাখের ফটোশুটের জন্য এক বিদেশির আলিশান বাসায় আয়োজন করা হয়েছে। বাসায় ঢুকতেই ওই ভদ্রলোক আমার সাদা আর লালের মিশ্রণে শাড়ি পরা আর সাজগোজ দেখে খুব মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। বিদেশিরা কারো প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেন না। অনেক সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করলেন শাড়ির এবং আমাদের সংস্কৃতির। তারপর কৌতূহলবশত: জিজ্ঞেস করলেন, এ শুটের বিশেষত্ব কী? কেন করছি? কেন সাদা আর লালের কম্বিনেশন?

আমি বললাম, আমাদের (বাঙালিদের) নববর্ষ ১৪ এপ্রিল। বাংলাদেশে অনেক ধুমধাম করে পালন করা হয়। কথাটা শেষ করার আগেই তিনি বলে বসলেন, ‘ওহ ইয়েস ইয়েস, গত বছরই তো তোমাদের এ উৎসবে অনেক মেয়েদেরকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে, তাদের ফ্যামিলি মেম্বারদের সামনে। পুলিশ হেল্প করার জন্য ছিল না, যেই কয়েকজন ছিল তারা অনেকেই দূর থেকে তাকিয়ে দেখেছে, যা খুবই দুঃখজনক। এর আগেও একবার বোমা হামলা হয়েছে, যেখানে মানুষ আহত আর নিহতও হয়েছে।’

কথাগুলো হয়তো এ ভদ্রলোক এমনি এমনি কথা প্রসঙ্গে বলেছেন। কিন্তু তার প্রতিটা শব্দ আমার হৃদয়ে একটা একটা ছেদ করে গিয়েছে, যা আমি লেখায় বোঝাতে পারব না। সেই দিনের জন্য আমার মুডটা আর চেঞ্জ করতে পারিনি।

যাই হোক, এবার পয়লা বৈশাখে আশা করছি, রাষ্ট্র কিছু শক্ত পদক্ষেপ নেবে। কেননা, এটি বাংলাদেশের একটি বড় উৎসব। রাষ্ট্রের উচিত, বিপুল পরিমাণের জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রাখা (যেমন রাখে হরতাল বা কোনো ধরনের ডিসপিউট-এর সময়)।

যেখানে বেশি ভিড় হয়, (যেমন: রমনার বটমূল, টিএসসি, উদ্যান) ইত্যাদি জায়গায় স্ট্যান্ডবাই অ্যাম্বুলেন্স আর ফায়ার সার্ভিস অ্যাক্টিভ রাখা উচিত।

মোবাইল টয়লেট রাখা উচিত (প্রয়োজনে ৫/১০ টাকা চার্জ করতে পারে)। কেননা মহিলা আর বাচ্চাদের সমস্যা হয়। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করা উচিত। ঘন ঘন করে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন থাকা উচিত, যাতে মানুষ তাদের ময়লা হাতের কাছের ডাস্টবিনে ফেলতে পারে, তাতে সিটি ক্লিন থাকতে সাহায্য করবে।

আমি জানি এ কথাগুলো কারো (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) কান পর্যন্ত পৌঁছবে না। আর পৌঁছলেও কারো কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু রাষ্ট্রের উচিত এ দিকটায় একটু চোখ দেওয়া। কারণ, এই উৎসবে রাষ্ট্র অনেক রাজস্ব আয় করছে। কেননা, গরিব-ধনী সব শ্রেণীর মানুষ কিন্তু এ উৎসবে শপিং করে থাকে।

আমার কথা আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আপনারা সবাই আসন্ন পয়লা বৈশাখ নিরাপদে পালন করবেন এটাই প্রত্যাশা করছি।

বৈশাখে প্রিয়তির পরিকল্পনা

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আন্তর্জাতিক এ মডেল আয়ারল্যান্ড থেকে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখেছি, পয়লা বৈশাখের সকালে মা বিশেষ কিছু রান্না করেন। আমিও বৈশাখের সকালে সন্তানদের জন্য কিছু রান্না করব। দিনটা বাচ্চাদের সঙ্গে কাটাব। আবহাওয়া ভালো থাকলে সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাব। আর অবশ্যই শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াব।

Print Friendly, PDF & Email