March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

রাত পোহালেই নিজামীর আপিলের রিভিউ রায় ঘোষণা

আদালত প্রতিবেদক : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রিভিউ রায় ঘোষণা করা হবে অাজ বৃহস্পতিবার। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। আদেশের জন্য মামলাটি কার্যতালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।

বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এর আগে গত ৩ মে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ আপিলের রিভিউ পয়েন্টের ওপর তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলে আদালত রায়ের জন্য ৫ মে দিন ধার্য করেন। এর আগে আপিল শুনানির সময় থেকে আসামিপক্ষের আইনজীবী নিজামীর বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে বিকল্প দণ্ড দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান।

শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, যে চারটি হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে যেন সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে। বিশেষ করে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সীমাহীন অপরাধ বলে উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সর্বোচ্চ শাস্তিই এ অপরাধের একমাত্র সাজা। ফাঁসি ছাড়া এর অন্য কোনও বিকল্প নেই।’

এর আগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের আপিলেও নিজামীর ফাঁসি বহাল রাখা হয়। সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, ‘আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হল। আপিলকারী মতিউর রহমান নিজামীকে অভিযোগ নম্বর ১, ৩ ও ৪ থেকে খালাস দেওয়া হলো অভিযোগ নম্বর ২, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ এর ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড বহাল রাখা হলো।’

আপিলের রায়ে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়েছে।

নিজামী হলেন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা তৃতীয় ব্যক্তি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে যার আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আর বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে এটি সর্বোচ্চ আদালতের দ্বিতীয় রায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালে এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঝুলিয়ে দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়ে রায়ে বলা হয়, আদালত সম্মত হয়েছে যে, তিনি যে মাত্রায় হত্যা, গণহত্যা ঘটিয়েছেন, তাতে সর্বোচ্চ সাজা না দিলে তা হবে ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা। জামায়াতের আজকের আমির নিজামী চার দশক আগে ছিলেন জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীর প্রধান।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর গত বছরের ১১ এপ্রিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ২১ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

Print Friendly, PDF & Email