March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

‘আমি বাংলাদেশের সাথে বেড়ে উঠেছি। এটাই এখন আমার সংস্কৃতি।’

ডেস্ক প্রতিবেদন : ঘুর্ণিঝরের কারণে বন্যা, ব্যবসাবিরোধী ধর্মঘট, কারখানায় আগুন, রাজনৈতিক অভ্যুত্থান, গুপ্তহত্যা এবং সর্বশেষ বিদেশিদের উপর সন্ত্রাসী হামলা; কোনো কিছুই থামাতে পারেনি বাংলাদেশে তৈরী পোষাক খাতের অগ্রদূত কি-হ্যাক সুং কে। তৈরী পোষাক খাতে ৩৬ বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রফতানিকারক হয়ে উঠেছে কোরিয়াভিত্তিক সুংয়ের প্রতিষ্ঠান ইয়াংগুন। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তিনি জাতির দুর্দশার চিত্র অবলোকন করেছেন, অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন। পোষাক খাতের নানা বিপত্তি পেরিয়ে বর্তমানে তিনি এ খাতের একজন মহারথীতে পরিণত হয়েছেন।
১৯৮০ সালে কারখানা প্রতিষ্ঠার পর ইয়াংগুনই ছিল বাংলাদেশের তৈরী পোষাক খাতের অগ্রদূত। ইয়াংগুন এবং সুং শ্রমিকদের ব্যাপারে উচ্চমান বজায় রাখার চেষ্টা করত, কারখানার মান, পেশাদারিত্ব এবং প্রশিক্ষণের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিল। যেখানে প্রশিক্ষণ শেষে অনেকে কাজে যোগদান করত কিংবা নতুন কোম্পানি শুরু করত। কিন্তু বাংলাদেশে ইয়াংগুনের প্রবেশ ছিল আকস্মিক।

চট্টগ্রামের নিজ কারখানা অফিস থেকে তিনি সম্প্রতি ফোর্বস এশিয়াকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সাথে বেড়ে উঠেছি। এটাই এখন আমার সংস্কৃতি।’

‘অনেকে আমার অন্তর্দৃষ্টির প্রশংসা করেন-বাংলাদেশে আগে আসার ক্ষেত্রে আমার সাহসী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন, কিন্তু এটা আমার অন্তর্দৃষ্টি ছিল না। আমরা এ সিদ্ধান্তের জন্য প্রলুব্ধ হয়েছিলাম।’ মৃদ্যু হেসে বলেন ৬৯ বছর বয়সী সুং।

ফারুক সোবহান, যিনি বাংলাদেশ এন্টাপ্রাইজ ইনস্টিটিউট নামক একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) হয়ে বেসরকারি খাতকে দেশে জোরদার করার চেষ্টা করতেন। এখাতের উন্নয়নে তিনি সুংকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

তিনি ফোবর্সকে বলেন, ‘তাদের (ইয়াংগুন) বহুমুখী প্রভাব ছিল, অনেক কোরিয়ান কোম্পানি তাদের অনুসরণ করত, অনেক মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা জানার জন্য লেগে থাকত।

পরিবারের সচ্ছলতা না থাকার কারণে সুং ১৯৭০ এর দশকে কোরিয়ান পরচুলা এবং পোষাক রফতানিকারকের কাজ করতেন। যেখানে তিনি ইউরোপীয়ান ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ করতেন। এ ধরণের ব্যবসার সময় তিনি বয়োবৃদ্ধ দুই নাগরিকের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। যারা পরবর্তী সময়ে ইয়াংগুনকে কাপড় প্রস্তুতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

২৭ বছর বয়সে ব্যবসা শুরুর পর সুংয়ের মূলধন ছিল তার অংশীদারদের চেয়ে কম। ফলে তিনি কাজের মাধ্যমে সমতা আনার চেষ্টা করেন। তখন তার বাংলাদেশি বন্ধু এবং অংশীদার তাকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের উৎসাহ দেন। একটি ভাড়া করা ভবনে ৩০০ কর্মী নিয়ে শুরু হয় ইয়াংগুনের কার্যক্রম।

এরপর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গুপ্তহত্যার শিকার হন। সুংয়ের অংশীদার বাংলাদেশে পরবর্তী ভ্রমণের বিষয়টি প্রত্যাখান করলেন। যার ফলে সব দায়িত্ব সুংয়ের উপর পড়ে। ১৯৮৪ সালে তাদের অংশীদারিত্বে ফাটল ধরে এবং সুং তখন ব্যয় সংকোচন করে অন্যদের কাছে ধারদেনা করেন।

বাংলাদেশে তখন পেছন ফিরে তাকায়নি ইয়াংগুন। ১৯৮৭ সালে ইয়াংগুন সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রফতানি প্রক্রিয়াজাত এলাকায় (ইপিজেড) স্থানান্তরিত হয়। ১৯৯১ সালে সাইক্লোনের কারণে চট্টগ্রাম ইপিজেডের প্লান্ট ডুবে যায়, ৩ লাখ পোষাক ক্রয়াদেশের পণ্য কাদায় তলিয়ে যায়, মেশিনগুলো সমুদ্রের পানিতে লবনাক্ত হয়ে যায়। ঢাকায় পৌঁছাতে সুংয়ের তিন দিন সময় লাগে। তিনি পানিরোধী বহুতল ভবন বিশেষ করে যেখানে বাছাই করা কাপড়গুলো পানি ধরাছোঁয়ার অনেক উপরে রাখার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন। ১৯৯৩ সালে ঢাকা ইপিজেডে সর্বপ্রথম কারখানা স্থাপন করে ইয়াংগুন।

‘এটা একটা ভালো অনুশীলন ছিল, কোম্পানির অনেক ক্ষতি হয়েছে, প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি ক্রেতাদের বিক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে পারিনি’-বলেন সুং।

এরপর বেতন বাড়ানোর দাবিতে কর্মীদের আন্দোলন শুরু হয়। কোম্পানির বাংলাদেশি কান্ট্রি ম্যানেজার মারধরের শিকার হন। এতে তিনি এতটাই আহত হন যে সিঙ্গাপুরে তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

এসবের পরও খেলাধুলার পোষাক তৈরীতে হাত দেয় ইয়াংগুন। বিষয়টি ব্যাপক আকারে প্রচার করেন সুং। এ কাজে তাদের কোরিয়ান (উত্তর) নিবন্ধন ছিল। এতে তাদের গ্রাহক ছিল নাইকি, এডিডাস, পাতাগোনিয়া, এল.এল বিন এবং লুলুলেমন। যদিও বিশ্বব্যাপী অন্য কারখানাগুলোর ক্রয়াদেশের কাছে তখন ইয়াংগুনের তেমন জায়গা ছিল না, তবু কোম্পানটি ভোক্তা ধরে রাখার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়।

বাংলাদেশে যখন এ কোম্পানির ভিত্তি মজবুত হয় তখন সুং কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াজাত জোন (কেইপিজেড) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে তিনি রকমারি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এ লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামে ২ হাজার ৪৯২ একর জমি কেনেন ১৯৯৯ সালে। সরকারি ইপিজেড থেকে স্বল্প দূরত্বে এর অবস্থান।

কিন্তু এমন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। সরকার জমি বিক্রি করলেও পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্র আটকে রাখা হয় পরবর্তী দশ বছর। এ সময়ের মধ্যে সেখানে সম্ভাব্য দখলদারীদের উত্থান শুরু হয়। স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ভিয়েতনামের পরিবর্তে সেখানে একটি মোবাইল ফোন কারখানা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। এসময় ইয়াংগুন আরো দেখতে পায় সেখানে উদিয়মান অর্থনীতির প্রতিষ্ঠানগুলো বড় আকারে তাদের প্লান্ট স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এসবরে কারণে সুং ওই এলাকার সৌন্দয্যবর্ধনের কাজ বিলম্বিত করেন। যদিও ইতোমধ্যে ইয়াংগুন ওই জায়গায় ১.৮ মিলিয়ন গাছ লাগিয়েছিল, একটি জলাধার নির্মাণ করে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সর্ববৃহৎ পানি সেচের ব্যবস্থা করেছিল। যেটা পাহাড়বেষ্ঠিত, সতেজ বায়ু প্রবাহ, পাখিসহ অন্য পশুদের অভয়ারণ্য মিলিয়ে বর্তমানে একটি রিসোর্টের মতো। যেখানে একটি গলফ খেলার মাঠ রয়েছে, ৫০০ টাকার বিনিময়ে যে কেউ গলফ খেলায় অংশ নিতে পারে।

ইয়াংগুন দু’বছরের মধ্যে চারটি কারখানা স্থাপনের শর্তে ২০০৯ সালে চূড়ান্তভাবে কেইপিজেডের অনুমোদন পায়। বর্তমানে সেখানে ১৫ হাজার কর্মী কাজ করছে। যেখানে ১৮টিরও বেশি প্রোজেক্ট রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেখানে একশরও বেশি সমাবেশকেন্দ্র স্থাপনের কাজে হাত দিয়েছে ইয়াংগুন। যেখানে প্রতিদিন ১ হাজার মানুষ অংশ নিতে পারবে।

সুং সম্প্রতি এক ভ্রমণে ফোর্বস এশিয়ার কার্যালয় যান। কোরিয়ান ইপিজেডের অনুমতি দিতে বিলম্ব করায় তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ফোর্বস এশিয়ার কাছে। চূড়ান্ত হস্তান্তরের দলিল না পাওয়ায় তিনি অন্য কোম্পানিগুলোকে কেইপিজেড এলাকায় স্থানান্তর করতে পারছেন না। সুং বলেন, ‘আমি বুঝতে পাচ্ছি না কেন পরিবশে বিষয়ক ছাড়পত্র দিতে এত বিলম্ব করা হচ্ছে এবং কেন আমি ১৭ বছর আগে সরকারকে অর্থ পরিশোধ করার পরও জমির দলিল পাচ্ছি না।’

তিনি অসহায় একটা হাসি দিয়ে বলেন, আমরা এর জন্য সংগ্রাম করছি। অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে (বাংলাদেশ) বর্হি:বিশ্বের বিনিয়োগ না আসার পেছনে এবং দেশটির সুনাম নষ্ট হওয়ার পেছনে এটা একটা কারণ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান মানসুর সুংয়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘এটা (কেইপিজেড) বাংলাদেশের জন্য ভালো উদাহরণ হতে পারে। অথচ এমন সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে চলেছে।’

তিনি জানান, ইয়াংগুনের জন্য যে ২ হাজার ৪৯২ একর জমির কথা বলা হচ্ছে সেগুলো অনেক মূল্যবান এবং একটা কোম্পানির জন্য অনেক বেশি বলে ঢাকায় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

‘কিন্তু জমি দেওয়ার পূর্বে বিষয়টি সরকারের চিন্তা করা উচিত ছিল।’ বলেন মানসুর।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বলেছেন, পরিবেশষ ছাড়পত্র এবং কেইপিজেডের জমির ব্যাপারে তারা দ্রুত সাড়া দিতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে মানসুর ফোর্বসকে বলেন, ‘একবার আপনি কোনো জিনিস দিয়ে সেটা ফেরত নিতে পারেন না।’

জুলাইতে একটি ক্যাফেতে বিদেশিদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে অনেক বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশ ভ্রমণ কমিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুংয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি আরো সমস্যার সম্মুখীন হলো। ইয়াংগুনসহ অনেক বহুজাতিক কোম্পানি তাদের কর্মীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি সাইক্লোন হওয়ার পর পরবর্তী মৌসুম না আসা পর্যন্ত আরেকটি হবেনা এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। এ সময়ের মধ্যে প্রতিরক্ষার জন্য আপনি উচ্চ ভবন বানাতে পারেন। কিন্তু এটা (গুলশান হামলা) ছিল হৃদয়ে আঘাত করার মতো।’

কিছু ক্রেতা বাংলাদেশে তাদের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও ইয়াংগুনের উৎপাদন সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আর সুং এখনি দেশ ছাড়ার বিষয়টি ভাবছেন না।

‘আমি অন্যদের মতো একই বাতাসে বেঁচে আছি। কীভাবে অবস্থার উন্নতি হয় আমরা কয়েকমাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। যাইহোক, আমি যে বিনিয়োগ শুরু করেছি তা যত দ্রুত সম্ভব তা শেষ করব। কারণ, বাংলাদেশের উন্নয়নে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাকে বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে।’-বলেন সুং।

কি হ্যাক সুং বর্তমানে বেশ ধনী মানুষ। সংশ্লিষ্ট্ নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইয়াংগুন হোল্ডিংয়ের ১৭ শতাংশের মালিক তিনি। তার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্য হোল্ডিং কোম্পানিতে তার আরো ২৯ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। সবমিলিয়ে তিনি ৩৪০ মিলিয়ন ডলারের মালিক। তিনি তিন মেয়ের পিতা। মেয়েরা তার ব্যবসার বিভিন্ন অংশ তদারকী করছেন। তার মেজো মেয়ে রায়িইয়ুন সুং তার হোল্ডিং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

তার নিজের বাল্যকাল এতোটা উর্বর ছিল না। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন সুং। ১৯৫০ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের সময় তিনি কেবল প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র ছিলেন। এ সময় তার পরিবার সিউল থেকে চ্যাঙনিংঙ চলে যান। দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে তাদের নিজ বাড়ি।

সুং পরবর্তী সময়ে লেখাপড়ার জন্য সিউলে ফিরে যান। তার বাবা সেখানে তার জন্য একটি বাড়ি কিনে দেন। পঞ্চাশ বছর পরও সুং সেই বাড়িতেই বসবাস করছেন। তিনি এ পর্যন্ত ৪ হাজার ক্যামেরা সংগ্রহ করেছেন। সেগুলো দিয়ে তিনি সিউলে একটি স্টুডিও বানাচ্ছেন।

ডিসেম্বর শেষে ইয়াংগুনের রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ১.৪ বিলিয়ন ডলার (যেখানে প্রকৃত মুনাফা ১২৯ মিলিয়ন ডলার)। যার মধ্যে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের তিনটি এলাকায় তৈরীকৃত পণ্য থেকে এসেছে। যেখানে ৬৫ হাজার কর্মী কাজ করে। বাকি মুনাফা এসেছে এল সালভাদর, ভিয়েতনাম এবং চীনের কুইংডো অঞ্চলে অবস্থিত প্রকল্প থেকে। কোম্পানিটি ইথিওপিয়াতেও প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে।

গত বছর ২৮ বিলিয়ন ডলার মোট বিক্রির মধ্যে বাংলাদেশি তৈরী পোষাক শিল্পের রফতানি থেকে এসেছে ৮২ শতাংশ। সূত্র: ফোর্বস এশিয়া

Print Friendly, PDF & Email