March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুবার্ষিকী পালন

ডেস্ক : নড়াইলের মেয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শুভ্রা মুখার্জির মামাবাড়ি সদর উপজেলার তুলারামপুরে দু’দিনব্যাপী ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, অচিরেই খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এ অঞ্চলের মানুষের পশ্চিমবঙ্গে যাতায়াতের সুবিধার্থে এই ট্রেনলাইন চালু করা হবে।

তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে নড়াইলবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় হাইকমিশনার শুভ্রা মুখার্জি ফাউন্ডেশনের উন্নয়নে ৫০ হাজার টাকা দেন।

শুভ্রা মুখার্জি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট সুবাসচন্দ্র বোসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

প্রধান অতিথি বলেন, শুভ্রা মুখার্জি এদেশের মানুষকে হৃদয় থেকে ভালোবাসতেন। সব সময় তার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে উপলব্ধি করতেন। ছোটবেলা নড়াইল ছেড়ে চলে গেলেও তার অন্তরে থেকে গেছে জন্মভূমি তথা বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। দু’দেশের মানুষের সেতুবন্ধনে শুভ্রা মুখার্জির ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য প্রতিমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য, জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, প্রকৌশলী শৈলেন্দ্রনাথ সাহা, খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মোল্লা জালাল উদ্দিন, যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ শাহীন চাকলাদার, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, তুলারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ, শুভ্রা মুখার্জি ফাউন্ডেশনের পরিচালক অয়ন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক কার্তিক ঘোষ, শুভ্রা মুখার্জির ছোট ভাই কানাই লাল ঘোষ প্রমুখ।

মৎস্য প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, এ স্মরণসভাই প্রমাণ করে এদেশের মানুষ শুভ্রা মুখার্জিকে মনে রেখেছে। ভবিষ্যতে দু’দেশের সম্পর্কের ভিত আরও শক্ত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও তার সহধর্মিণী শুভ্রা মুখার্জি যোগ দিয়ে আমাদের ধন্য করেছিলেন। শুভ্রা মুখার্জির কথায় সেদিন বুঝেছিলাম, তিনি এদেশের মানুষ ও ছাত্রছাত্রীদের অন্তর থেকে ভালোবাসেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সেদেশে (ভারত) সফরে গিয়েছিলেন। সফরের এক পর্যায়ে শুভ্রা মুখার্জি আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। মা যেমন সন্তানদের সাথে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে কথা বলেন তেমনভাবে এদেশের ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলেছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেছিলেন শুভ্রা মুখার্জি।

শুভ্রা মুখার্জির মামাতো ভাই কার্তিক ঘোষ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নিকে নিয়ে শুভ্রা দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তবে, সে সময় সাথে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি। পরে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জামাইবাবুকে (প্রণব মুখার্জি) সঙ্গে করে নড়াইলের ভদ্রবিলার বাড়িতে আসেন শুভ্রা দিদি। ছোটবেলায় শুভ্রা দিদিকে সবাই আদর করে ‘গীতা’ বলে ডাকতেন। প্রণব মুখার্জির সাথে বিয়ের পর নড়াইলের মেয়ে ‘গীতা ঘোষ’ পরিচিতি পান ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে।

২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট ভারতের নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শুভ্রা মুখার্জি।

শুভ্রা মুখার্জির জীবনী থেকে জানা যায়, ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বাবা অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শুভ্রার শৈশবের প্রথম দিকটা নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে নিজবাড়িতে (পিত্রালয়) কাটলেও পরবর্তীতে মামাবাড়ি তুলারামপুরে চলে যান। মামাবাড়ি থেকে স্থানীয় চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৫৫ সালের দিকে মায়ের সঙ্গে ভারতের কলকাতায় চলে যান শুভ্রা। নয় ভাইবোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। পরবর্তীতে তার অন্য ভাই-বোনেরা ভারতে চলে গেলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বসবাস করছেন শুভ্রার ভাই কানাইলাল ঘোষ। ভদ্রবিলার পৈতৃকভিটা ও জমিজমা দেখাশোনা করেন তিনি (কানাইলাল)। শুভ্রার মামাতো ভাইয়েরা বসবাস করছেন তুলারামপুর গ্রামে।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন শিক্ষক। গাইতে পারতেন রবীন্দ্রসংগীতও। লিখেছেন ‘চোখের আলোয়’, ‘চেনা অচেনায় চীন’, INDIRA GANDHI IN MY EYES’ (ইন্দিরা গান্ধী ইন মাই আই’স) প্রবন্ধগ্রন্থসহ গল্প ও ফিচার।

শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ‘চোখের আলোয়’ গ্রন্থে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, তার (শুভ্রা) বয়স তখন ১৪, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বয়স ২২ বছর। সেই বয়সে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ ও সুরজিৎ এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নি। ভারতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তারা।

Print Friendly, PDF & Email