March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সোনারগাঁ মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ

গাজী মোবারক (সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ) : মেঘনা গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে বালি ভরাট করে মারীখালী নদী দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের শিল্পাঞ্চলে এ দখল বানিজ্য হচ্ছে বলে জানা যায়।
সড়েজমিনে দেখা যায়, সামিট পাওয়ার প্লান্টের বিপরীত পার্শ্বে, সরকারী ডিসি গার্ডেন সংলগ্ন মারীখালি নদীর প্রায় অর্ধেক জায়গা রাতের আঁধারে ফ্রেশ চিনির ডাষ্ট দিয়ে ভরে ফেলছে। প্রতিরাতে আস্তে আস্তে এভাবেই নাব্যতা হারাচ্ছে ¯্রােতবাহী এ নদীটি। পিরোজপুর ভ’মি অফিস সুত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে মেঘনা গ্রæপ চর রমজান সোনাউল্লাহ মৌজার আর এস খতিয়ান-১ ও আরএস ৩০৯০ নং দাগে ৩ একর খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়। সেখানে তারা স্থাপনা তৈরি করে ভোগদখল করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোরবানপুর গ্রামের বাসিন্দা জানান, গায়ের জোরে একের পর এক দখল চললেও প্রতিকার পাচ্ছেন না সোনারগাঁয়ের সাধারণ মানুষ। নদী দখলের কারণে জরিমানা হয়, জমি দখলমুক্ত করতে হয় সালিশ, হয় মানববন্ধন। এসবের পরও দখলের রাজত্ব থামছে না মেঘনা গ্রুপের।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মেঘনা গ্রুপের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বজ্র্যের কারণে মেঘনা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে ক্রমেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে নদীর পানি। নদীর পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সোনারগাঁ এলাকায় মাছের প্রজনন কমে গেছে। ফলে একসময়ের মাছের বড় উৎস বৈদ্যেরবাজার বর্তমানে মাছশূন্য। এলাকাবাসী জানান, নদী সরকারের সম্পত্তি ও মেঘনা গ্রুপের লোকজন জোড় করে এ নদী দখল করছে। মেঘনা গ্রæপের দালালদের হুমকি মামলা হামলার ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করে না। জমি দখলের পরেও কোনো প্রতিবাদ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে জোড়ে পারি না। জমি, নদী দখলের প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়াসহ নানা রকমের ভয় দেখায়।’ এজন্য ভয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করে যাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। তাছাড়াও স্থানীয় বিশেষ পেশার একজনের ঠিকাদারীতে এ দখল বানিজ্য চলছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
প্রাকৃৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এ বলা হয়েছে, ‘প্রাকৃৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না, বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।’ আইনের সংজ্ঞার ‘চ’ অংশে বলা হয়েছে, ‘প্রাকৃতিক জলাধার’ অর্থ নদী, খাল, বিল, দীঘি, ঝরনা বা জলাশয় হিসেবে মাস্টার প্ল্যানে চিহ্নিত বা সরকার, স্থানীয় সরকার, কোনো সংস্থা কর্তৃক, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে ঘোষিত কোনো জায়গা এবং সলল পানি এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে এমন কোনো ভূমিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।’ আর শ্রেণী পরিবর্তন বলতে ‘মাটি ভরাট, পাকা, আধাপাকা বা কাঁচা ঘরবাড়ি এবং অন্য যে কোনো ধরনের ভবন নির্মাণসহ কোনোভাবে সেই অবস্থার পরিবর্তন হইতে পারে এমন কিছুকে বুঝাইবে।’ এই আইন অনুযায়ী নদী বা নদীতীরবর্তী প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, দখল ও জলাশয়ের শ্রেণী পরিবর্তন সম্পূর্ণ বেআইনি ও নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে মেঘনা গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কার্তিক বাবুর মোবাইলে ফোন কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বি এম রুহুল আমিন রিমন জানান, বন্দোবস্ত জমি ছাড়া যদি নদী দখল করে তবে খুব দ্রæত সড়েজমিন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর ইসলাম বলেন, খাল, নদী কিংবা সরকারী জমি দখল আইনত অপরাধ। আমরা যথাশীঘ্র তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

Print Friendly, PDF & Email