March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

নতুন আইজির কড়া নজরদারিতে ‘আতঙ্কে’ রয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

শাহীন আলম চৌধুরীঃ  নবনিযুক্ত আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কড়া নজরদারিতে আতঙ্কে রয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি নিয়োগ, বদলি এবং পদোন্নতিতে কোনো ধরনের তদবির গ্রহণ করা হবে না বলেও হুশিয়ারি করে দিয়েছেন পুলিশ প্রধান। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর হবে। ইতিমধ্যে পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইডের (পিআইও) মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। রোববার থেকে তৎপরতা বেড়ে গেছে পিআইও দফতরের।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি আবদুল্লাহ হীল বাকী এবং ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে কাজ শরু করেছেন এ দফতরের কর্মকর্তারা। প্রায় দুই ডজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রোফাইল নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দৈনিক প্রথম কথাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। পুলিশ সদর দফতর মনে করে ঘুষ, দুর্নীতি ও মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট ডিআইজি, কমিশনার ও এসপিদের সৎ থাকা জরুরি। কিন্তু দায়িত্বশীল অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর স্পষ্ট হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, কেউ কেউ ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এছাড়া তারা নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ায় মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। কারণ যেসব ওসি বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি বা পোস্টিং নেন তারা কর্মস্থলে যোগদান করেই ওই টাকা উঠাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এজন্য মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করেন। পুলিশের কয়েকজন ডিআইজি, কমিশনার এবং এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ জমা হয়েছে।এ তালিকায় রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, ভোলা, যশোর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রংপুর, মুন্সীগঞ্জ, শেরপুর এবং ঝিনাইদহসহ কয়েকটি এলাকার পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার নাম উঠেছে।

এদিকে গত রোববার পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ত্রৈমাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন পুলিশের নবনিযুক্ত আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ওই ক্রাইম কনফারেন্সের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, পুলিশের ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে দেশে মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না।

পুলিশ বাহিনীতে লোকবল নিয়োগ, পদায়ন ও বদলিতেও ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। এই ঘুষের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত। সভায় পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কোনো কোনো থানায় নতুন ওসি যোগদান করতে হলে তাকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। শুধু ওসি নন, এসআই ও এএসআই বদলি করতেও লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এত টাকা ঘুষ দেয়ার পর ওই কর্মকর্তা মাদকের সঙ্গে যুক্ত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ঘুষের এই অর্থ তিনি তুলবেন কী করে? ডিসি বিপ্লব কুমার আরও বলেন, জেলার এসপিরা যদি ওসির কাছ থেকে টাকা নেন, তাহলে ওসিকে মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে বলবেন কীভাবে? মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও ডিআইজিরা টাকার বিনিময়ে পুলিশ সদস্য নিয়োগ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশের কারণে মাদক বন্ধ হচ্ছে না।

ক্রাইম কনফারেন্সে আরো অভিযোগ করা হয়, বেশির ভাগ ডিআইজি এক থানা থেকে আরেক থানায় ওসিদের পোস্টিং দেন টাকার বিনিময়ে। এসআই বদলি করতে লাখ লাখ টাকা নেন। কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি দিতেও লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেন। বলা হয়, কনস্টেবল নিয়োগে এসপির ঘুষ নেয়া বন্ধ করতে পারলে অনেক দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। এ সময় দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। কনফারেন্স শেষে বিক্ষুব্ধদের অনেকে বলতে থাকেন, এভাবে ওপেন মিটিংয়ে যে ধরনের আলোচনা হলো তা শুভ লক্ষণ নয়।

সভায় পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারী কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার প্রতিষ্ঠান বহন করবে না। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামনে ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগে কোনো রাজনীতিবিদদের কথা না শোনার আহ্বান জানিয়ে এসপিদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, এ নিয়োগ নিয়ে কোনো পুুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেলে বিন্দুমাত্র ছাড়া দেয়া হবে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে প্রত্যেক জেলায় পুলিশ সদর দফতর থেকে এসপি এবং অতিরিক্ত এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা পাঠানো হবে বলেও আইজি জানান।

তিনি বলেন, যেসব পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রাখাকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। ক্রাইম কনফারেন্স ও এর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মনিরুজ্জামান দৈনিক প্রথম কথাকে বলেন, ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।

তবে এটুকু নিশ্চিত যে, মাদক বন্ধে পুলিশ সদর দফতর সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। এর সঙ্গে কোনো আপস নেই। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email