March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মদিন আজ

ডেস্ক: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯ জুলাই ১৮৬৩ – ১৭ মে ১৯১৩) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা। তিনি ডি. এল. রায় নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রায় ৫০০ গান রচনা করেন। এই গানগুলি বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত গান “ধনধান্যে পুষ্পে ভরা”, “বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ” ইত্যাদি আজও সমান জনপ্রিয়।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। তাঁর পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবংশের দেওয়ান।তাঁর বাড়িতে বহু গুণীজনের সমাবেশ হত। কার্তিকেয়চন্দ্র নিজেও ছিলেন একজন বিশিষ্ট খেয়াল গায়ক ও সাহিত্যিক। এই বিদগ্ধ পরিবেশ বালক দ্বিজেন্দ্রলালের প্রতিভার বিকাশে বিশেষ সহায়ক হয়।তাঁর মা প্রসন্নময়ী দেবী ছিলেন অদ্বৈত আচার্যের বংশধর।

দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতশিক্ষার হাতেখড়ি পিতার নিকট। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পিতার নিকট থেকে। তারপর বিলেতে থাকা অবস্থায় তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীত শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভাকে শানিত করেন, যা পরবর্তীকালে বাংলা গানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারা উদ্ভাবনে সহায়ক হয়।

বাংলা গানের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কথা ও সুরের অপূর্ব সমন্বয়ে গান রচনা করার ক্ষমতা ছিল দ্বিজেন্দ্রলালের সহজাত। তদুপরি ওস্তাদ পিতার নিকট থেকে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতে তালিম নেওয়ার ফলে সঙ্গীত রচনায় পাশ্চাত্য সুর আহরণ ও আত্তীকরণ তাঁর জন্য সহজসাধ্য হয়েছিল।

দ্বিজেন্দ্রলাল ১৮৮৭ সালে প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আন্দুলিয়া নিবাসী প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের কন্যা এগারো বছর বয়সের সুরবালা দেবীকে বিবাহ করে সংসারজীবন শুরু করেন। এ সময়কালে দাম্পত্যসুখমগ্ন দ্বিজেন্দ্রলাল রচনা করেন অপূর্ব সব প্রেমের গান, যা ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত আর্য্যগাথা-র দ্বিতীয়ভাগে স্থান পায়। এ পর্বের দুটি গান হলো: ‘ছিল বসি সে কুসুম-কাননে/ আর অমল অরুণ উজল আভা/ ভাসিতেছিল সে আননে।’ এবং ‘আজ যেন রে প্রাণের মতন/ কাহারে বেসেছি ভালো!/ উঠেছে আজ মলয় বাতাস,/ ফুটেছে আজ মধুর আলো।’ প্রথম গানটি কীর্তন ঢঙে রচিত এবং রবীন্দ্রনাথের খুব প্রিয় ছিল। এ ধরনের গান রচনার মূল প্রেরণা ছিল স্ত্রী-প্রণয়। তাই প্রথম ভাগের গানে যেখানে প্রকৃতিপ্রেম ও দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাস দেখা যায়, সেখানে দ্বিতীয়ভাগের গানে দেখা যায় তাঁর প্রণয়োচ্ছ্বাস।

১৯০৩ সালে স্ত্রী সুরবালার মুত্যু দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতজীবনে বিরাট পরিবর্তন আনে। আনন্দ ও হাসির গান রচনার ভুবন থেকে তাঁর বিচ্যুতি ঘটে। – স্ত্রী-বিরহক্লিষ্ট তিনি লেখেন: ‘আজি তোমার কাছে/ ভাসিয়া যায় অন্তর আমার/ আজি সহসা ঝরিল/ চোখে কেন বারি ধার?’

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে গণজাগরণমূলক গান রচনার প্রচলন শুরু হয়, তাতে দ্বিজেন্দ্রলালের অবদান ছিল অসামান্য। এ সময় তিনি প্রচুর দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন যা স্বদেশীদের প্রচন্ডভাবে উদ্দীপিত করে। পরবর্তীকালে দেশাত্মবোধক গান রচনাতেই তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটে।

অসাধারণ শিল্পকর্মের মূলতত্ত্ব যে সত্য, সুন্দর ও আনন্দ- দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতকর্মে তার সার্থক প্রকাশ ঘটেছে; তাই তাঁর গানে রয়েছে মৌলিকত্বের ছাপ। বাংলা কাব্যসঙ্গীতে তথা আধুনিক বাংলা গানে সুর, ভাব ও বিষয়ভিত্তিক রচনায় বিভিন্ন ধারার সমন্বয়করণ দ্বিজেন্দ্রলালের এক মহৎ কীর্তি। একটি সুস্থ সঙ্গীতপরিমন্ডল সৃষ্টিতে তাঁর এ অবদান বাংলার সঙ্গীতাঙ্গনে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ন । অাজ এই শুভন্মদিনে তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ।

  • তঁর কিছু বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থঃ
    আর্যগাথা, ১ম খণ্ড (১৮৮৪)
    The Lyrics of India (ইংল্যান্ডে থাকাকালীন রচিত) (১৮৮৬ )
    আর্যগাথা, ২য় খণ্ড (১৮৮৪)
    আষাঢ়ে (১৮৯৯)
    হাসির গান (১৯০০)
    মন্দ্র (১৯০২)
    আলেখ্য (১৯০৭)
    ত্রিবেণী (১৯১২)

উল্লেখযোগ্য নাটকঃ

  • (১) প্রহসন বা লঘু রসাশ্রয়ি নাটক- সম্পাদনা
    একঘরে (১৮৮৯)
    কল্কি অবতার (১৮৯৫)
    বিরহ (১৮৯৭)
    এ্যহস্পর্শ বা সুখী পরিবার (১৯০১)
    প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২)
    পুনর্জন্ম (১৯১১)
    আনন্দ-বিদায় (১৯১২)
  • (২) ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক:
    তারাবাঈ (১৯০৩)
    রানা প্রতাপসিংহ (১৯০৫)
    দুর্গাদাস (১৯০৬)
    সোরার রুস্তম (১৯০৮)
    নূরজাহান (১৯০৮)
    মেবার পতন (১৯০৮)
    সাজাহান (১৯০৯)
    চন্দ্রগুপ্ত (১৯১২)
    সিংহল বিজয় (১৯১৫)
  • (৩) পৌরাণিক নাটক:
    পাষাণী (১৯০০)
    সীতা (১৯০৮)
    ভীষ্ম (১৯১৪)
  • (৪) সামাজিক নাটক:
    পারাপারে (১৯১২)
    বঙ্গনারী (১৯১৬)

৪৯ বছর বয়সে, ১৯১৩ সালের ১৭ই মে তারিখে কলকাতায় দ্বিজেন্দ্রলালের জীবনাবসান ঘটে। সমাধিস্থল কলকাতা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)

Print Friendly, PDF & Email