March 19, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

বদলে যাচ্ছি। একি পরিবর্তন।

আলী আসগর স্বপনঃ  আমার এক বন্ধু সেদিন ৫৮বছর বয়সে পা দিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,এই বয়সে পৌছে নিজের মধ্যে কিছু পরিবর্তন অনুভব করছো কি?বন্ধু উত্তর দিল—-এতবছর নিজের পিতামাতা, ভাইবোন,স্ত্রী,
ছেলেমেয়ে, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ভালবাসা দেবার পর এবার শুধু নিজেকে ভালবাসতে শুরু করেছি। হ্যাঁ,আমি পরিবর্তিত হচ্ছি।
দীর্ঘদিন পরে বুঝতে পেরেছি যে আমি কোনো মানচিত্র নই যে সমস্ত জগত আমার ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। তাই,সবাইকে ঝেড়ে ফেলে আমি বদলে যাচ্ছি।আজকাল আমি দোকানে,বা বাজারে গিয়ে দু পয়সা নিয়ে আর ঝগড়া করিনা। কারণ আমি বুঝতে শিখেছি, দু/চার পয়সা বেশী খরচ হলে আমি দরিদ্র হয়ে যাব না। বরং যে লোকটি দু পয়সা বেশী রোজগারের আশায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে সে দু পয়সা বেশী পেলে হয়ত তার মেয়েটির লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারবে। সত্যি, আমি বদলে যাচ্ছি। আজকাল গাড়ি থেকে নেমে খুচরো টাকা নেবার জন্য অপেক্ষা করে থাকিনা। যে লোকটি রোজগার করছে রাতদিন, কটা টাকা বেশী পেলে হয়ত তার মুখে হাসি ফুটবে। সেই হাসিটুকুর আশায় আমি নিজেকে বদলে দিচ্ছি।
বয়স্ক লোকদের বলা একই গল্প বারবার শুনেও বলিনা,থামেন তো বহুবার শুনেছি। বুঝতে শিখেছি, এই গল্পগুলোর মধ্যে তাদের অতীতের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, যা তাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে কিছুটা আনন্দ বয়ে আনে।তাই,আমি আর সেই আগের মত তাদের কথা শুনে বিরক্ত হই না।
লোকের ভূল ত্রুটি দেখে তাকে শুধরে দেবার জন্য আগের মতন আর প্রাণপণ লড়াই শুরু করিনা কারণ আমি বুঝতে শিখে গেছি, সারা পৃথিবীর লোকদের শোধরানোর দায় আমার নয়। বরং আমার মনের শান্তি আমার কাছে অনেক বেশী দামী।
হ্যাঁ ,আমি বদলে গেছি।এখন আমি বিনা কারনেই মানুষকে অভিনন্দন জানাই, তাদের প্রশংসা করি, এতে তারা যে আনন্দ পায়, তাদের সেই আনন্দ দিতে পেরে আমি নিজেও আনন্দিত হই।
আমাকে কেউ অবজ্ঞা করলে আমি আর আগের মত অপমানিত হই না,কিছু মানুষ আছে ধান্দাবাজ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অল্পতেই যার তার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। তারা যথাযোগ্যকে দিতে জানে না সম্মান। নিজের মান সম্মান ও ইজ্জ্বতের কথা নিয়ে কখনো ভাবে না। তারাই হাম্মভরা ভাব নিয়ে চলে সমাজে।এসব মুখোশধারীদের থেকে
আমি নিজেই দূরে সরে যাই।আমি বুঝি,তারা হয়ত আমার মূল্য বুঝতে না পেরে আমায় হেলা করছে,কিন্তু আমি তো জানি আমার কাছে আমি অমূল্য।
আজকাল আবেগের যখন তখন অপ্রত্যাশিত প্রকাশ আমাকে আর লজ্জিত করে না কারন আমি শিখে গেছি যে এই আবেগগুলোই আমাকে ‘মানুষ’ বলে নিজের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এখন আর নিজের Egoকে আঁকড়ে ধরে থাকি না। বুঝে গেছি, Ego মানুষকে একাকিত্বের দিকে ঠেলে দেয়। বরং এটি ছেড়ে দিলে সম্পর্কগুলো সুন্দর হয়ে ওঠে।
প্রতিটি দিনকে জীবনের শেষ দিন মনে করে বাঁচি, তাই দিনের প্রতিটি মুহুর্তকে মূল্যবান মনে করে জীবনকে উপভোগ করে বাঁচতে শিখে গেছি।
আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করেছি, নিজেকে আনন্দ দেবার জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে নেই, আমার আনন্দের জন্য কেউ দায়ী নয়, আমি নিজেই সম্পূর্নভাবে আমার সুখ, আমার আনন্দের জন্যে দায়ী। হ্যাঁ,আমি বদলে যাচ্ছি, এই বয়সে পৌঁছে আমি জীবনের প্রকৃত অর্থ বুঝতে শিখেছি। তাই আমার ভেতরেও পরিবর্তন হয়ে চলেছে।আমি এখন খুব অল্প সময়ই বা অল্পদিনেই মুখোশ পড়া মানুষ গুলোকে সহজেই চিনতে পারি।সেই মুখোশধারী মানুষ গুলোকে আমি দয়া করি।তাদেরকে আমি করুনা করে এক দারুন সুখ অনুভব করি।এক ধরনের তৃপ্তিতে আমার দেহ মন সুখানুভূতিতে ভরপুর হয়ে উঠে সেই সঙ্গে আমি বুঝতে পারি আমার পরিবর্তন হচ্ছে।
Print Friendly, PDF & Email