আলী আসগর স্বপনঃ আজ ২৬ জুন,ঠিক ২৬ বছর আগে ১৯৯৪ সালের এইদিনে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল মহিয়সী মানুষটি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
তিনি বিস্মৃতি প্রিয় জাতিকে মৌলিক শেকড়ের সন্ধান দিয়েছিলেন। এই ভূখণ্ডে আজও অনেক তরুন প্রাণ জেগে আছে তাঁর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে। জীবদ্দশায় যারা তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন, তাঁরা জানেন কী অদম্য সাহসে প্রচণ্ড বিরুদ্ধ সময়ে তিনি রুখে দাঁড়াবার ডাক দিয়েছিলেন।
অতীতে তিনি রাজনীতি সচেতন হলেও রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ভবিতব্যই তাঁকে রাজনীতির অঙ্গনে নিয়ে আসে। স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মান্ধ ঘাতক-দালালদের পর্যায়ক্রমিক পুনর্বাসনে অপমানিত ও ক্ষুব্ধ জননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করেন।
আমাদের অনুপ্রেরনার উৎস তিনি, আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম, আজও দাঁড়াই সকল ষড়যন্ত্র ও ইতিহাস বিকৃতির বিপরীতে….।
জাহানারা ইমামের বলিষ্ঠ ভূমিকা। ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ গণআদালতের ঐতিহাসিক রায়। যে রায়ে বাঙলার কাফের সর্দার গোলাম’কে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল।
জামায়াত বিএনপি সরকার তাঁকে সর্ব প্রকার অপমান করেছিলো,১৯৯২ সালের ২৮ শে মার্চ জননী জাহানারা ইমাম সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়, তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেই মামলা মাথায় নিয়ে।
আশির দশকের শুরুতে, ১৯৮২ সালে তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো তাঁকে। ১৯৯৪ সালের ২৬শে জুন, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্রয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালের বেডে ৬৫ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গড়ে তুলেছিলেন, স্বাধীনতা লাভের পর সব’চে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন। পঁচাত্তর পরবর্তী অমানিশার কালে ঘাতক-রাজাকার-পাকিস্তানপন্থী অমানুষদের পুনর্বাসনের জঘন্য নোংরামি ও নির্বিচার মিথ্যাচারে বিপর্যস্ত বাংলাদেশে তিনি নেমে এসেছিলেন রাজপথে ‘কাফের সর্দার’ গোলামের বিচার দাবীতে। তিনি জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেননি, কিন্তু ২০১৩, ২০১৫ এবং ২০১৬ সাল এবং সম্প্রতি লাখো শহীদের রক্তস্নাত আমাদের পবিত্র ভুখণ্ডে শীর্ষ ৭ কসাইয়ের ফাঁসি কার্যকর হতে দেখেছি আমরা।
শহীদ জননী’র দুটো স্বপ্নের একটি ‘যুদ্ধাপরাধী’দের বিচার’ আংশিক বাস্তবায়ন এবং চলমান রয়েছে। তাঁর অপর স্বপ্ন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ আজও দূর দিগন্তে থাকা এক চাওয়ার নাম। সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। শহীদ জননী’র মহাপ্রস্থানের পর। এ দায়িত্ব তাঁর, আমাদের সবার। নিজ দেশ, নিজ প্রাণ, নিজ পরিবারের জন্যই সম্মিলিতভাবে এ দায়িত্ব নিতে হবে। পঁচিশতম মহাপ্রয়াণের বেদনাময় দিনে, তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপনের একমাত্র পথ হতে পারে এটিই।
তিনি তো আমাদের মাঝেই আছেন চিরভাস্বর, স্বমহিমায় উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে। যদিও, বাংলার পবিত্র মাটিতে তাঁর পবিত্র পদচিহ্ন আর পড়বেনা।
স্বাধীনতাবিরোধীদের উল্লসিত হবার কিছু নেই। বাংলার হৃদয়ে তিনি জ্বেলে দিয়েছেন অনির্বাণ শিখা। ঝড়-ঝাপ্টা যত প্রচন্ডই হোক না কেন সেই শিখা জ্বলতে থাকবে। আমরা তাঁকে স্মরণ করছি আনত শ্রদ্ধায়, হৃদয়ের গভীরতম ভালোবাসায়। পরম করুনাময়ের কাছে আপনার চিরশান্তি কামনা করি।
জাহানারা ইমাম বঙ্গবন্ধু-উত্তর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃজাগ্রত করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। পুত্র ও স্বামী হারানোর শোক এবং ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস করেও তিনি বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের সমস্ত বৈরিতা উপেক্ষা করে ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার এক গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তা তিনি সফলভাবেই পালন করেছেন।
এ বিভাগের আরো..
অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয়
সংসদ সদস্যকে আইন প্রনয়ন নয়, মানতেও হবে
জাতীয় চারনেতা হত্যা নেপথ্যে থাকা কুশলীব কারা