March 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার ও জালিয়াতি রোধকল্পে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের সজাগ থাকার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার ও জালিয়াতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান।
রাস্ট্রপতি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি একদিকে যেমন আমাদের জন্য অবারিত সুযোগের দ্বার উন্মোচিত করেছে, তেমনি এর অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জেরও জন্ম দিয়েছে।’
রাষ্ট ্রপ্রধান তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সজাগ দৃষ্টি রাখার ও অনুরোধ জানান।
রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গভবনের গ্যালারী হল থেকে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ আয়োজিত চারদিনব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশ্ব সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন আইটি-২০২১’ এবং ‘অ্যাসোসিও ডিজিটাল সামিট-২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তথ্যপ্রযুক্তির বিনিময় ও হস্তান্তর বৈশ্বিক উন্নয়নের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন বা আমদানিই যথেষ্ট নয় বরং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রপতি হামিদ আশা প্রকাশ করেন ‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে  ইনশাআল্লাহ।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা, পেশাজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অগ্রগামী প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।’
২০২১ সাল বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অনন্য ও স্বরণীয় বছর উল্লেখ করে হামিদ বলেন, এ বছর আমরা একই সাথে উদযাপন করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।
তিনি জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ২০০৯ সালে দেশের মাত্র ৮ লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবা পেত। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ কোটির বেশি। এ সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে চার গুণের বেশী।
আব্দুল হামিদ বলেন,এ বছরেই পূরণ হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, দূরদর্শী চিন্তা থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান গবেষণা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য পদ লাভ করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পথ চলা থেমে যায়।
দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে তথ্যপ্রযু্ক্িত বিকাশে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙ্গে তা মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার বিগত এক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ-কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্ণমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশনকে ঘিরে নেয়া অধিকাংশ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। ফলে দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে।
‘শহর ও গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বিভক্তি কমে আসছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল যন্ত্রকে হাতের নাগালে আনার পাশাপাশি মানুষের হাতের মুঠোয় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জনগণ এখন ঘরে বসেই দুই শতাধিক নাগরিক সেবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাচ্ছেন’,তিনি যোগ করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব, মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার প্রমাণ মহামারীর দুঃসময়ে তথ্য-প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা।
তিনি উল্লেখ করেন,  ‘দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, বিচারিক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং সেবা ইত্যাদি হয়ে পড়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশে গড়ে উঠছে ডিজিটাল অর্থনীতি। আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। আইটি খাতে রপ্তানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবাখাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশজুড়ে গড়ে তুলেছে ৩৯টি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা হচ্ছে।  ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে সারাবিশ্বে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়।
দেশে সাড়ে ৬ লক্ষ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের পেশাগত উন্নয়নে আইডি কার্ড প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার মো. আব্দুল মান্নান, উইটসার চেয়ারম্যান ইয়ানিস সিরোস এবং বিসিএস সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ-উল-মুনীর অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। (বাসস)

Print Friendly, PDF & Email