March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

কেন্দুয়ায় এখনো ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই স্কুলে যাতায়াত করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা

কেন্দুয়া (নেত্রকোণা): নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউপি’র রাজনগর গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সুতী নদী। নদীটির উত্তর পাড়ে ১৯৩৮ সালে রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। বিদ্যালয়টিকে বর্তমানে ইউনিয়নের মডেল ক্লাস্টার হিসেবে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজনগর ও রোয়াইলবাড়ি গ্রামের সংখ্যাই বেশি। বর্ষা এলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলাগাছের ভেলা বা ডিঙ্গি নৌকায় পারি দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে হয় শিক্ষার্থীদের। পক্ষান্তরে নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলে চিকন এক বাঁশের সাঁকো দেয়া হয়। প্রতিদিন ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এই চিকন এক বাঁশের সাঁকোতে হামাগুড়ি খেয়ে এপারে-ওপারে যাওয়া আসা করতে হয়। অনেক সময় সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায় কেউ কেউ। এসময় তাঁদের বই-খাতা খোয়া যায় বা ভিজে নষ্ট হয় এবং শিক্ষার্থীরা আহতও হয়। এই সমস্যা তাদের নিত্যদিনের। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই এলাকার শিক্ষার্থীদের কষ্ট-দুঃখের কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কাছে জানিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি বলে জানা যায়। ফলে নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় চরম দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তাদের দাবি একটি ব্রীজ হলে বদলে যাবে স্কুলসহ এলাকার দৃশ্যপট।

স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম বলে, নদীর দক্ষিণ পাড়েই তার বাড়ি, স্কুল থেকে তার বাড়ির দুরত্ব কয়েকশ গজ। তাদের বাড়ির কাছাকাছি আর কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই এক বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। প্রবল বর্ষায় যখন স্রোত ও নদী ভরা পানি থাকে তখন দুই-তিন মাস প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুলে আসতে হয় এবং এমনও অসুস্থ হয়ে যাই পরে যার ফলে মাঝেমধ্যে স্কুলে আসা সম্ভব হয় না। নদীতে একটা ব্রীজ হলে আমরা নিশ্চিন্তে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে পারতাম।

রাজনগর সরকারি প্রাথমিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম জানান, তাঁর বিদ্যালয়ে সিংহভাগ ছাত্র/ছাত্রীই নদীর পাড়ের বাসিন্দা। অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন তারা স্কুলে আস যাওয়া করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বৃষ্টি বাদলের দিনে তাদের বেশি কষ্ট পোহাতে হয় এবং প্রায় সময়ই তারা স্কুলে আসা-যাওয়ার বেলায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্কুল সংলগ্ন একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউপি’র চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান আকন্দ জানান, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবসীর যাতায়াতের জন্য একটা ব্রিজ জরুরি দরকার এবং বিষয়টি এমপি মহোদয় জানেন, আমার জানামতে তিনি ডিওলেটারও দিয়েছেন। আশা করছি খুব শিঘ্রই ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে হতে স্কুল সংলগ্ন ব্রিজ নির্মাণ হবে।

কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তাসলিমা বেগম লিপি সাংবাদিকদের জানান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারের বিষয়টি দেখলে খুবই কষ্ট লাগে। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই, বিষয়টি অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email