March 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

হুম্মাম চৌধুরীকে ক্ষমা চাইতে হবে অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী

ডেস্ক: হুম্মাম চৌধুরীকে ক্ষমা চাইতে হবে অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছে একাত্তরে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ‘৭১।

সম্প্রতি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া, মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান হুম্মাম কাদের চৌধুরী চট্রগ্রামে বিএনপির সভায় প্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করে যে বক্তব্য রেখেছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সন্তান ও পরিবারেরা। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া আসামীদের তিনি উল্ল্যেখ করেছেন ”শহীদ” হিসেবে।

প্রকারন্তরে, এই উক্তি মুক্তিযুদ্ধের তিরিশ লাখ শহীদের আত্বদানকে অস্বীকার ও ব্যংগ করার সামিল। আমরা এর আগে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ঘাতক আবদুল কাদের মোল্লার কবরকে ”শহীদ” নামাকিংত করার ওৗদ্ধত্য দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক পার্টি ও পরবর্তীতে আন্তজার্তিক ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধাপরাধের (মানবতাবিরোধী অপরাধ) বিচার ও রায় কার্যকর করা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর আর একা বাড়ি ফিরতে পারবে না। প্রত্যেক শহীদের (যুদ্ধাপরাধে দন্ডিত) বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে যেতে হবে (সুত্র: সময় টিভি অন লাইন রিপোর্ট)। হুম্মাম কাদের চৌধুরীর এই ধৃষ্টতা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তির বিরুদ্ধে।

এই বক্তব্য থেকে পরিস্কার বোঝা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত, সাম্প্রদায়িক-ধর্মান্ধ-মৌলবাদী শক্তিগুলি স্বাধীন বাংলাদেশ-বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মানবিক, আধুনিক সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ও একটি পাকিস্থানি-তালেবানী মার্কা সামন্তীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্টায় একতাবদ্ধ রয়েছে। প্রথম সুযোগেই হুম্মাম চৌধুরীর মত প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে ধুলিস্যাৎ করবে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মত মুক্তিযুদ্ধের দালালদের পরিবারগুলি তিনটি প্রজন্ম ধরেই একাত্তরে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তার প্রমান হুম্মাম চৌধুরীর সাম্প্রতিক বক্তব্য। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীও গোটা পাকিস্তান আমল ধরে পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের তাবেদারী করে গেছেন এবং একাত্তরে পুত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সংগে একত্রে চট্রগ্রামে নিরীহ ও মুক্তিযোদ্ধা বাঙালী হত্যা, অত্যাচার, ধর্ষণ ও লুন্ঠনের কাজে ব্যাপৃত থেকেছেন। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: দলিলপত্র. সেক্টর কমান্ডার ফোরামের নথি ও আন্তজার্তিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ বিষয়ে বিশদ বলা আছে।

উল্লেখ্য, বিএনপির প্রকাশ্য জনসভায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনও একটি অশনী সংকেত। যুদ্ধাপরাধের বিচার বিএনপি কখনই সমর্থন করেনি। সুতরাং জামাতে ইসলামী ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীরদের মত প্রতিক্রিয়াশীলদের সংগে বিএনপির আঁতাত নিয়েও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখা দরকার, যুদ্ধারপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাবনাগত রাজনৈতিক অবস্থান আর দন্ডে দন্ডিত ঘাতকদের সন্তানদের মুখের বয়ান এক যা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ানক আশংকার।

বিগত কয়েকবছর ধরে সারা দেশে প্রতিক্রিয়াশীল-সাম্প্রদায়িক মনোভাবের সাংগঠনিক আস্ফালন নিয়ে প্রজন্ম ৭১ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সন্তান) বারংবার নিজেদের শংকার কথা বলে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সরকারের বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে চলমান ষড়যন্ত্রের দিকে সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তি ও সংগঠনের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কিন্তু নিরাশ হতে হয়েছে দেখে যে এ ব্যাপারে সরকারের পরিস্কার কোনো ভুমিকা নেই যেমন অনুপস্থিত মুক্তিযুদ্ধের সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তিগুলোর এৗক্য।

প্রজন্ম ৭১ দৃঢ় ভাবে দাবী করছে, হুম্মাম চৌধুরী তার এই ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন অন্যথায় সরকার যেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেন, কারন ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, তাকে ”শহীদ” বলার অর্থ আদালতের রায় অমান্য করা। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

Print Friendly, PDF & Email