March 29, 2023

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

বহিরাগত বখাটেদের মারধরের শিকার ইবির দুই শিক্ষার্থী, মহাসড়ক অবরোধ

ইবি প্রতিনিধি: স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে আগুন জ¦ালিয়ে অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। চার ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধের পর রাত ১০টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন ঘটনায় জড়িতদের রাতের মধ্যে আটক করার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেকে মেহেদী হাসান সুপ্ত তার বন্ধু-বান্ধবীর সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় স্থানীয় বখাটেরা তাদের ভিডিও ধারণ করে। পরে বিষয়টি টের পেয়ে সুপ্ত ভিডিও ডিলিট করতে বললে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় দুই শিক্ষার্থী বাইক নিয়ে শেখপাড়া বাজার গেলে স্থানীয় বখাটে আকাশ ও তার ৪/৫ জন সহযোগী মারধর করে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন- ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষেও মেহেদী হাসান সুপ্ত ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের জিসাদ। হামলার ঘটনার পর দুই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে তাদেরকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এসময় আন্দোলনকারীরা বলেন, বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে এসে বাইক নিয়ে শোডাউন দেয়। তাদেরকে কিছু না বলার কারণে আজ তারা আমাদের গায়ে হাত তোলার সাহস পেয়েছে। আমাদের মেরুদন্ডহীন প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থী হামলার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান সুপ্ত বলেন, দুপুরে মফিজ লেকে আমরা বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের লেকে ছিলাম। সেখানে বহিরাগত স্থানীয় দুজন যুবক এসে বান্ধবীদের সহ ভিডিও ধারণ করে। তাদেরকে ভিডিও ডিলিট করতে বললে আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এসময় তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হলে তারা আমাদেও দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে আজকে বিকেলে আমরা শেখপাড়া বাজারে বাইকে তেল নিতে গেলে স্থানীয় আকাশসহ ৪/৫ জন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এদিকে অভিযুক্ত আকাশের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ইবি মেডিকেলের অফিস সহায়ক খন্দকার নাইমুল রেজা জানান, সন্ধ্যায় আহত অবস্থায় দুজনকে মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। একজনের হাতের কবজি ছুলে গেছে ও আরেকজনের মাথায় দুই স্থানে ফুলে গেছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা বলছিলো মাথা ঘোরাচ্ছে বা অস্বস্তি লাগছে। পরে তাদেরকে কুষ্টিয়া সদরে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আন্দোলন চলাকালীন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রক্টর পুলিশের প্রটোকলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে নয়টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ফরহাদ হোসেন ও কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) সাব্বিরুল আলম ঘটনাস্থলে আসেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন ঘটনায় জড়িতদের রাতের মধ্যে আটক করার আশ্বাস দেন।

বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমরা তাদের সাথে কথা বলতে সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার। পরে তারা আবার আমাদের সাথে কথা বলতে এসেছে। আমরা আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ^াস ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের আশ^াস দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রক্টরিয়াল বডি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি।

চার ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধের পর পুলিশ সুপারের আশ^াসে অবরোধ বন্ধ করে আন্দেলনকারীরা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরের সাথে ভিসির বাংলোয় সাক্ষাত করেন। সেখানে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নিরাপদ ক্যাম্পাস ও অভিযুক্তদের আগামীকালের মধ্যে গ্রেফতারের আশ^াস দিলে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।